কবুতরের রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
কবুতরের রোগের লক্ষণ ও সেগুলোর প্রতিকার জানার জন্য যদি আপনি আগ্রহী হয়ে থাকেন। তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ এই আর্টিকেলে সালমোনেলা রোগের লক্ষন ও প্রতিকার এবং রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার আরো এর সাথে জড়িত অনেক বিষয়গুলো আপনারা জানতে পারবেন।
কবুতর হচ্ছে এক ধরনের পোশাক প্রাণী। যে প্রাণীটি অতি সহজেই পোশাক মানে। কিন্তু কবুতরের কিছু রোগ রয়েছে যেগুলোর কারণে কবুতর মারা যেতে পারে। যেমন ঘাড় বাঁকা বা টাল রোগ, সালমোনেলা রোগ, রানীক্ষেত রোগ এবং বসন্ত রোগ। এগুলো মধ্যে কিছু রোগের প্রতিকার রয়েছে।
পোস্টসূচিপত্রঃ
সারসংক্ষেপ
আপনি কি একজন কবুতরের খামারি বা শখের বসে লালন পালন করে থাকেন। কবুতর একটি পোষক জাতীয় প্রাণী। কবুতরের মধ্যে যেমন বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। ঠিক তেমনি বিভিন্ন ধরনের রোগও রয়েছে। যে রোগগুলো কবুতরের দেহে বাসা বাঁধতে পারে।
কবুতর খামারিরা তার কবুতর গুলোকে অনেক ভালোবাসে। সেই জন্য যখন কোন কবুতর রোগে আক্রান্ত হয়। তখন তারা ঘাবড়ে যায় কি করবে তা বুঝে উঠতে পারে না। ঘাবরানোর কোন কারণ নাই আমি আজকে এর প্রতিষেধক নিয়ে আসছি।
ঘাড় বাকা বা টাল কবুতরের রোগ
সাধারণত কবুতরের ঘাড় বাঁকা টাল রোগটি হয়ে থাকে ভিটামিন বি এর অভাবে। যেমন কবুতরের অতিরিক্ত পাতলা পায়খানার মাধ্যমে ভিটামিন বি কমে। তাই ভিটামিন বি এর পরিমাণ যেন না কমে যায় সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। যেকোনো রোগ একদিনের সৃষ্টি হয় না। রোগটি সৃষ্টি হতে সময় লাগে।
টাল বা ঘাড় বাকা কবুতরের রোগের লক্ষণ
- ঘাড় নাড়াতে চারাতে বা সোজা করতে পারে না। যার ফলে কবুতর অনেক কষ্ট পায়।
- খাবার খাওয়ার সময় সঠিক জায়গায় ঠুকর মারতে পারে না।
- কবুতর টাল রোগের কারণে উঠতে বা সোজাভাবে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলে।
- তার নিজ কক্ষপথে গোল গোল ঘুরতে থাকে ইত্যাদি।
ঘাড় বাকা বা টাল কবুতরের রোগের প্রতিকার
- A-B1 ও Renamycin. A-B1 এর প্রতিটি ট্যাবলেট এর দাম মাত্র এক টাকা। সাথে Renamycin খাওয়ালে ভালো হবে। A-B1 সম্পূর্ণ ট্যাবলেট ও Renamycin ট্যাবলেট চার ভাগের একভাগ খালি পেটে খাওয়াতে হবে।
- প্রতিদিন সকালে ৩-৪ টি করে গোল মরিচ খালি পেটে খাওয়াতে হবে।
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট কবুতরকে রোদে রাখেন। পাশে একটু ছায়ার ব্যবস্থা করে দিবেন। যেন একটু বিশ্রাম নিতে পারে।
- নিয়মিত কবুতরকে রাইস স্যালাইন খাওয়াবেন। ভিটামিন বি ১ঃ ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম মিশিয়ে ১মাসে ৩-৪ দিন ১ বেলা করে খাওয়ান।
সালমোনেলা কবুতরের রোগ
কবুতরের এই রোগটি সাধারণত ছাত্রকজনিত বা ব্যাকটেরিয়া কারণে হয়ে থাকে। সালমোনেলা ভাইরাস জনিত রোগ। সালমোনেলা রোগের কারণে কবুতরের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগটি একটি কবুতর দ্বারা সকল কবুতর আক্রান্ত হতে পারে। সালমাোনেলা রোগ আস্তে আস্তে কবুতরের দেহে বিস্তার ঘটায়।
রোগটি পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের দ্বারাই অনেক দ্রুত ছড়ায়। সালমোনেলা রোগটি ৬০% - ৭০% পানি থেকে হয়ে থাকে। বন্য কবুতরের সাথে মেলামেশা করলে হয়ে থাকে।
সালমোনেলা কবুতরের রোগের লক্ষন
- প্রত্যেকদিন যে খাবার খায় তার তুলনায় কম খাবে।
- খাবার কম খাওয়ার পরে গা ফুলিয়ে ঝিম মেরে বসে থাকবে।
- অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা বা সবুজ বা চুনা জাতীয় পায়খানা হবে।
সালমোনেলা কবুতরের রোগের প্রতিকার
- কবুতরকে পানি গরম করার পর হালকা ঠান্ডা করে খাওয়ান বা পানির মধ্যে ফিটকিরি মিশিয়ে ২০ মিনিট রাখার পরে খাওয়ান।
- Hameco-ph একটি সিরাপ, চামচে ২-৩ মিলি নিয়ে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এভাবে ৩-৪ দিন খাওয়ান।
- ইলেক্ট্রলাইট স্যালাইন খাওয়ান। স্যালাইনের নামঃ Electromin Powder, Renalyte Powder, O Saline ইত্যাদি।
রানীক্ষেত কবুতরের রোগ
কবুতর একটি পোষ জাতীয় প্রাণী। প্রত্যেকটি প্রাণী রোগে আক্রান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে সচেতন হতে হবে। কারণ কবুতর অল্পতেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত রানীক্ষেত রোগ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে প্যারামাইক্সা। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ।
রানীক্ষেত রোগে যখন কোন একটি কবুতর আক্রান্ত হবে সাথে সাথে অন্য কবিতা থেকে কবুতরটি কে আলাদা করে রাখতে হবে। যেন অন্য কবুতর এই রোগে আক্রান্ত না হয়। এই রোগে যে সকল কবুতর আক্রান্ত হয়। তার শতকরা ১০০ ভাগের মধ্যে ৪০ থেকে ৬০ ভাগ কবুতরই মারা যায়।
এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও যে কবুতর ছয় থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে মারা না যায়। তাহলে বুঝতে হবে কবুতরটি সুস্থ হয়ে গেছে। কবুতরকে সবসময় স্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে রাখতে হবে। অস্বাস্থ্যকর পানি যেন পান না করে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
রানীক্ষেত কবুতরের রোগের লক্ষণসমূহ
- রানীক্ষেত রোগ হলে কবুতর এক জায়গায় ঝিম মেরে বসে থাকবে।
- খাবার খাওয়াতে অনীহা দেখাবে। আগের তুলনায় অনেক কম খাবার খাবে।
- এই রোগের ফলে কবুতর উড়তে পারবে না বা সমস্যা হবে।
- ঘাড় সোজা করে রাখতে পারবেনা। অস্বাভাবিক আচরণ করবে।
- পায়খানা চুনের মতো পাতলা হবে।
- শ্বাসতন্ত্র থেকে শ্বাস নিতে সমস্যা বা কষ্ট হবে হবে। অনেক জোরে জোরে শ্বাস নেবে।
- চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়বে। বমিও হতে পারে।
- পাখা এবং পা প্যারালাইস হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কবিতর অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটায়।
রানীক্ষেত কবুতরের রোগের প্রতিকার
আপনার আশেপাশের পশু ডাক্তারের কাছে বা পশু হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যাপারে পরামর্শ নিন।বসন্ত কবুতরের রোগ
সাধারণত কবুতর অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু বসন্ত বা পক্স রোগ তাদের মধ্য অন্যতম। এই রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত রোগ। যে কবুতরের এই রোগে আক্রান্ত সেই কবুতরের সংস্পর্শে যে কবিতর আসবে সে কবুতরও এই রোগে আক্রান্ত হবে। এইজন্য সাবধান যে সকল কবুতর এই রোগে আক্রান্ত তাদেরকে আলাদা রাখুন। এই রোগ মূলত মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
খামারের আশেপাশে যদি অপরিষ্কার থাকে তা থেকে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় মশা সৃষ্টি হয় । মশার প্রকোপ বেশি হলে প্রয়োজনে কয়েল ধরিয়ে দেন বা মশারি টাঙিয়ে দেন। কবুতরকে বসন্ত রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সফল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। একটি পানি থেকেও ছড়াই। এই জন্য সব সময় কবুতরের খাবার ও পানি পরিষ্কার থাকতে হবে।
বসন্ত কবুতরের রোগের লক্ষণ
- শরীরের যে সকল স্থানে পসম নেই। ঐ সকল স্থানে গুটি গুটি ফোড়া হয়।
- নাকে এবং গালে গুটি গুটি ফোড়া হয়।
- কবুতরের পশ্চাৎ স্থানে ফোড়া হয়।
- কবুতরের মুখের ভিতরেও গুটি গুটি ফোড়া হয়। যার ফলে কবুতর খেতে পারে না।
- চোখের আশেপাশেও হয়ে থাকে।
বসন্ত কবুতরের রোগের প্রতিকার
- একটি পাত্রে হলুদ এবং পটাশিয়াম নিন তারপর দুটিকে ভালো করে মিক্স করে নিন। যে সকল জায়গায় ফোড়া আছে ওই জায়গায় গুলোই মিক্স কৃত হলুদ ও পটাশিয়াম লাগিয়ে দিন। সাবধান কোনভাবেই যেন কবুতরের চোখে না লাগে।
- আয়োডিন সারা দিনে দুই থেকে তিনবার লাগান।
- রিবোমিন সারা দিনে দুইবার খাওয়াতে হবে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পর পর অর্ধেক করে।
- রাইস স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
শেষ কথাঃ আসসালামুয়ালাইকুম। আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন। এই আর্টিকেলের কবুতরের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন। অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন। ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।
এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url