স্বদেশ প্রেম রচনা for class 5, 6, 7, 8

মানুষ ঠিক যেভাবে নিজেকে ভালোবাসে তেমনি স্বদেশের প্রতি প্রেম বা ভালবাসা নিবেদন করতে হবে। আবার অনেক সময় নিজের থেকেও দেশকে বেশি ভালবাসতে হবে। তাহলেই বরং স্বদেশ প্রেম ফুটে উঠবে।
স্বদেশ প্রেম রচনা for class 5, 6, 7, 8
আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত মাতৃভূমিকে ভালোবাসা। আমরা যে যেখানেই থাকি সেখান থেকেই আমাদের মাতৃভূমিকে ভালোবাসতে পারি। তাই আমাদের সকলের উচিত আমাদের মাতৃভূমিকে ভালোবাসা।
পোস্টসূচিপত্রঃ 

    ভূমিকা

    মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার চেতনায় হলো স্বদেশ প্রেম বা দেশপ্রেম। দেশপ্রেম মানুষের অন্যতম প্রধান সদগুণ। দেশপ্রেম ব্যতীত সুনাগরিক তথা সুন্দর মানুষ হওয়া যায় না। দেশপ্রেম ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং কৃষ্টি ও ঐতিহ্যর লালনের মাধ্যমে দেশপ্রেমের প্রতিফলন ঘটে থাকে।

    দেশপ্রেমের স্বরূপ

    দেশপ্রেম বা দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। গর্ভধারিনী জননীকে সন্তান যেমন ভালোবাসে, তেমনি দেশ মাতৃকাকেও মানুষ জন্ম লগ্ন থেকেই শ্রদ্ধা করতে এবং ভালোবাসতে শেখে। তাই প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে আত্মদানেও মানুষ পিছপা হয় না। যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির ইতিহাসে দেশ প্রেমীদের অমর কীর্তি গাঁথা রচিত হয়েছে।

    মানুষ মাতৃভূমি ছেড়ে কোনো সুখের সদনে গিয়েও সুখ পায় না। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজ দেশ ত্যাগ করে সুদূর ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে গিয়েও সুখ পাননি। তাই যুগে যুগে সাহিত্য ও কাব্যের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে স্বদেশপ্রেম চেতনা। কাজ ও ত্যাগের মহিমাতেই প্রকৃত দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়। লোক দেখানো দেশপ্রেম একটি ঘৃণ প্রবণতা।

    স্বদেশ প্রেমের আদর্শ

    স্বদেশের যে কোন গৌরবে দেশপ্রেমিক মাত্র গর্ববোধ করেন। তেমনি দেশের দুর্দিনে বা অমঙ্গলে শঙ্কিত চিত্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বা উৎকণ্ঠিত হন। সকল স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষার স্বেচ্ছায় দুঃখকে বরণ করে নেন। দেশপ্রেমীরা দেশের স্বাধীনতা বা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে নির্দ্বিধায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। 
    গৌরব উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে এ ব্যাপারে সেরাজউদ্দৌলা, তিতুমীর, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে আত্মবিসর্জন অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র শিক্ষক, লাখ লাখ মা-বোন, ভাষা আন্দোলনের শহীদ রফিক, বরকত, জব্বার, সালাম সহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সাতজন বিশেষ দের নাম শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতে পারি। 

    সুইজারল্যান্ড এর ইউনিয়ন টেল, ফ্রান্সের জোয়ান ডি. আর্ক, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, চীনের মা ও সেতুং প্রমুখের নাম দেশপ্রেমের ইতিহাসে অমলিন। ভারতবর্ষের ইতিহাসে অসংখ্য দেশপ্রেমী পুরুষের পাশাপাশি চাঁদ সুলতানা, প্রীতিলতা প্রমুখ নারী ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।

    স্বদেশ প্রেমের লক্ষণ বা বহিঃপ্রকাশ

    মুখে দেশ প্রেমের বুলি কপচালেই প্রকৃত দেশপ্রেমী হওয়া যায় না। দেশপ্রেমের প্রতি অন্তরে যে ভালোবাসা আছে তার প্রমাণ দিতে হবে কাজের মাধ্যমে। একজন দেশ প্রেমিকের কাছে নিজের জীবনের চাইতেও দেশ বড়। দেশের দুর্দিনের প্রকৃত দেশ প্রেমিকের সংখ্যা নিরূপণ করা যায়। 

    আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধে কিংবা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একজন দেশপ্রেমিক নির্দ্বিধায় জীবন উৎসর্গ করতে পারেন। সন্তানের অমঙ্গলে মাঝে মা যেমন বিচলিত হন, দেশের বিপর্যয়ে সচেতন দেশপ্রেমিক তেমনি বিপন্নতা বোধ করেন। ১৯৭১ সালে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ প্রেমের চরম আদর্শ স্থাপন করে গেছেন।

    ধর্মের দেশপ্রেমের তাগিদ

    মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম নেই, যে ধর্মে দেশকে ভালোবাসার নির্দেশ নেই। সকল ধর্মে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর মহান ধর্ম প্রচারকগণ প্রত্যেকেই ছিলেন অকুণ্ঠ দেশপ্রেমী। 

    মহানবী (স.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত কালে মাতৃভূমির জন্য অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। মানুষ জীবনে যেকোনো সময়ে যেকোন স্থান থেকে দেশকে ভালবাসতে পারে। কৃষক কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে, সাহিত্য তার সাহিত্য সাধনার মাধ্যমেও দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে।

    স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব

    ব্যক্তি জীবন ও জাতীয় জীবন উভয় ক্ষেত্রেই দেশপ্রেমের গুরুত্ব অপরিসীম একজন আদর্শ নাগরিক কখনোই স্বদেশ বিমুখ হতে পারে না স্বদেশ প্রেমহীন মানুষ, মানুষ নামের কলঙ্ক। জাতীয় জীবনে উন্নতির পূর্ব শর্ত হচ্ছে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর উন্নত ও উন্নতশীল দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, জনগণের অসীম দেশপ্রেমী তাদের উন্নতি এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এদেশবাসীর দেশপ্রেম মন্ত্রশক্তির মতো কাজ করেছে।

    উপসংহার

    দেশপ্রেম মানব জীবনের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ ও অমূল্য সম্পদ। একটি মহৎ গুণের হিসেবে প্রত্যেক মানুষের মানুষের মধ্যেই দেশপ্রেম থাকা উচিত। দেশ প্রেমের মূল লক্ষ্য দেশকে ভালোবাসা। স্বদেশ প্রেম বিশ্ব প্রেমেরই আংশিক রূপ। ব্যক্তিস্বার্থ কে ত্যাগ করে সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের কল্যাণে আত্মনিবেদিত থাকাই যথার্থ দেশপ্রেমীর আদর্শ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url