পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা শ্রেনী ৫, ৬, ৭, ৮
পুরো পৃথিবীর পরিবেশ এর দূষণ ও প্রতিকার করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর এই দায়িত্ব কর্তব্য পালন করার জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আর এই দূষণ প্রতিকার করনের উপায় জানুন।
এই পৃথিবীতে আমরা মানুষ বহুকাল থেকে বসবাস করি। আর এই পরিবেশ দূষণের পিছনেও আমরা দায়ী। এই দূষণ প্রতিকার করার উপায় গুলো আমাদের বের করতে হবে। তাই দূষণ ও তার প্রতিকার করার উপায় রচনা মাধ্যমে জানাবো।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
ভূমিকা
পৃথিবী জুড়ে ঘনিয়া আসছে পরিবেশ সংকট। মানুষ সৃষ্ট যন্ত্র সভ্যতার গোলাবত্তন থেকেই চলেছে পরিবেশের উপর মানুষের অত্যাচার। সুস্থ পরিবেশের সুস্থ জীবন এখন আর নেই। আল্লাহর প্রদত্ত প্রকৃতি রাজ্য আজ বিপন্ন প্রায়। সেই সাথে মানব জীবন ও প্রাণিজগৎ আজ প্রকৃতির বিপন্নতায় ধ্বংস প্রায়। বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞানী, সমাজকর্ম ও রাজনীতিকদের সামনে পরিবেশ দূষণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কি
মানুষ চারপাশের যা কিছু নিয়ে বসবাস করে তাই পরিবেশ। অর্থাৎ মানুষের জীবন যাপনের উপকরণ ও ক্ষেত্র সবকিছুই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। যে পরিবেশে মানব জীবনের স্বাভাবিক বিকাশ বিঘ্নিত হয় এবং প্রাণীকুল বিপন্ন বোধ করে তাকে পরিবেশ দূষণ বলা হয়।
পরিবেশ দূষণের কারণ
পরিবেশ দূষণের বহুবিধ কারণ রয়েছে। তবে নিম্নলিখিত কারণগুলোকে মুখ্য কারণ হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। আর পরিবেশ দূষণের কারণ গুলো চিহ্নিত করে। সেগুলোকে প্রতিকার করতে হবে।
অবাধ শিল্পায়ন
শিল্পায়নের কারণে প্রতিদিন বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ বাড়ছে। এই বর্ধিত বর্জ্য পদার্থ পানির সাথে মিশে পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। বর্জ্য অপসারণ ও নির্মূলে শিল্প মালিকদের দায়িত্বহীনতা এ সমস্যাটিকে গুরুতর করে তুলেছে।
জনসংখ্যার বিস্ফোরণ
অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর মুখে আহার জোগাড় করার জন্য বন জঙ্গল সাফ করে আমাদের জমিতে পরিণত করতে হচ্ছে। এতে দিন দিন পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। তাছাড়া মানুষের মলমূত্র কফ কাশি বাতাস ও পানিকে দূষিত করছে। জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এর ব্যবহার পরিবেশকে বিপন্ন করছে।
অস্ত্র প্রতিযোগিতা
পারমানবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় সমুদ্র ও ভূগর্ভে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়। যুদ্ধের সময় পরমাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্ব পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। পরমাণু চুলের বর্জ্য ও পড়ে থাকত অস্ত্র সামগ্রী আজ সবচেয়ে বড় পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি করেছে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার চেরনোবিলে পরমাণু দুর্ঘটনা থেকে প্রচুর পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
যান্ত্রিক জানের ব্যবহার
তরল জ্বালানি চালিত যানবাহনের অবাধ ব্যবহার অবহকে দূষিত করে তুলেছে। যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বিষাক্ত গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়াচ্ছে। তাছাড়া যানবাহনের তীব্র ভেপু শব্দ দূষণ ঘটাচ্ছে। যা মানুষের স্নায়বিক, বৈকল্য, নিদ্রাহীনতা, মানসিক রোগ ইত্যাদি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পরিবেশ দূষণের প্রতিকার
আমাদের পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জেনে সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ এই সুন্দর পৃথিবীকে আমরা দূষণ করছি। আর এই দূষণের বিরুদ্ধে যে প্রতিকার ও পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলেরই এই পদক্ষেপ গুলো নিতে হবে। তবে আমরা এই পৃথিবীকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে পারবো। পরিবেশ দূষণের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্রথমেই মানুষের মাঝে পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। যাতে তারা অবাধে বৃক্ষ না কাটে, অতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার ও যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ থেকে বিরত থাকে।
যুদ্ধ মনোভাব পরিহার
বিশ্বের নেত্রী বৃন্দ যদি অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধ মনোভাব পরিহার করেন তাহলে পরমাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রজনিত পরিবেশ দূষণ থেকে বিশ্ববাসীর রক্ষা পাবে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ
বিশ্বের লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে না পারলে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। জনসংখ্যা কে কাম্য সংখ্যার মাধ্যমে রাখতে পারলে পরিবেশ সুস্থতা ফিরে পাবে।
বৃক্ষরোপণ
বৃক্ষ নিধন ও প্রচুর বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের সুস্থতা ফিরে আনা যায়। সেজন্য বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।
উন্নত যান্ত্রিক কৌশল আবিষ্কার
শিল্পক্ষেত্রে আরও উন্নত যান্ত্রিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে হবে যাতে বর্জ্য বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা কম থাকে। তাছাড়া বর্জন নির্মূল ও অপসারণেও উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণা চালাতে হবে।
সামাজিক আন্দোলন
পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে এক দুর্বার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসার কথা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশবাদী সংগঠন গড়ে উঠেছে। ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন সংগঠন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আন্দোলন করছে।
পরিবেশ সংরক্ষণে করণীয়
পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব পৃথিবীতে বসবাসরত সকল মানুষের। কিন্তু আমরা অনেকেই এই সংরক্ষণের দায়িত্বটি এড়িয়ে যায়। তাই চলুন কিভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যায় জেনে আসি।পরিবেশ সংরক্ষণে যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো হলো।
- জাতীয় পরিবেশ নীতির সফল বাস্তবায়ন।
- আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা।
- সমন্বিত ও পরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার করা।
- জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা।
- অবকাঠামো বিনির্মাণের পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে প্রাক নির্ধারণ।
- পরিবেশ সংরক্ষণে রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
- কাঠের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা।
- পরিকল্পিত নগরায়ন ব্যবস্থা করা।
- ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ করতে হবে।
- রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো।
- চারণভূমির অপসারণ।
- শিল্প স্থাপনে আবাসস্থল বর্জন করতে হবে।
- নিরাপদ পানির ব্যবহার শুরু করতে হবে।
- পরিবেশ সংরক্ষণে প্রচার-প্রচারণা সম্প্রসারণ ইত্যাদি শুরু করতে হবে।
উপসংহার
এই বিশ্বকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের উপযোগী করতে চাইলে আমাদের সকলকে পরিবেশের সুস্থতা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের বসবাসের জন্য পৃথিবী একটাই এবং এই ছোট্ট পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুকান্ত ভট্টাচার্য পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করার যে অঙ্গীকার ব্যর্থ করেছিলেন, সেই অঙ্গীকার এখন বিশ্বের সকলেরই হওয়া উচিত।
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার শেষ কথা
আসসালামুয়ালাইকুম প্রিয় তথ্য পাঠক। এই পয়েন্টটি রচনার অংশ নয়। আপনারা যদি পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনাটির class 5, 6, 7, 8 ছাত্র-ছাত্রী হয়ে থাকেন এবং পড়ে ভালো লাগে। তাহলে আপনার ক্লাসের বন্ধুদের সাথে রচনাটি শেয়ার করুন। পুরো রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url