দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা - গাভীর দুধ বৃদ্ধির খাদ্য তালিকা

আপনারা যারা দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানার জন্য খোঁজাখুঁজি করছেন। তাদেরকে বলছি খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে গাভীর দুধ বৃদ্ধির খাদ্য তালিকাগুলো জেনে নিতে পারেন। এই তথ্যটি পড়ার মাধ্যমে আপনি নতুন কিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন। যা জানার পরে আপনার অনেক উপকারে আসবে।
দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা - গাভীর দুধ বৃদ্ধির খাদ্য তালিকা
যারা নতুন খামার দিবেন বলে মনে করছেন। আবার অনেকেই খামার দিয়েছেন। সেখানে একটি গাভীও রয়েছে। সে গাভীর জন্য পুষ্টিকর খাবার তালিকার প্রয়োজন। কারণ একটি গাভী পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার না পেলে দুধ দিতে পারে না। তাইতো সঠিক খাবার তালিকা জানার জন্য পুরো তথ্যটি পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ 

    দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা

    প্রত্যেকটি মানুষের দৈহিক ও শারীরিক শক্তির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনি গরুর শারীরিক ও দৈহিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবারের প্রয়োজন হয়। যারা নতুন খামারি রয়েছেন দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। গাভীকে যদি সঠিক নিয়মে খাদ্য প্রদান না করা হয়। তাহলে সেই গাভীর থেকে আশানুরূপ কোন ফল প্রত্যাশা করা উচিত হবে না।

    তাই আপনাকে সঠিক খাদ্য তালিকা সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সুষম খাদ্যের উপাদান ছয় ধরনের হয়ে থাকে। এই সুষম খাদ্যের সবগুলো খাবার গরুর খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এর মধ্য থেকে একটি খাবার যদি গরুর খাদ্য তালিকায় না থাকে। তাহলে ওই খাবারের মধ্যে যে পুষ্টি রয়েছে। সেই পুষ্টি থেকে গরু বঞ্চিত হবে। আর আজকে আমি আপনাকে দেখাবো কিভাবে এই সুষম ছয়টি খাবার একসাথে মিস করে দানাদার খাদ্য তৈরি করা যায়।
    • আমিষ জাতীয় খাদ্য
    • শর্করা জাতীয় খাদ্য
    • চর্বি জাতীয় খাদ্য
    • ভিটামিন
    • মিনারেল
    • বিশুদ্ধ পানি
    দানাদার খাবারঃ দানাদার খাবার গরুকে খাওয়ানোর আগে অবশ্যই একটি বিষয়ে আপনার ধারণা থাকা প্রয়োজন। যে গরুটিকে আপনি দানাদার খাদ্য দিচ্ছেন তার ওজন কত। কারণ প্রত্যেকটি গরুকে তার ওজনের ওপর ভিত্তি করে দানাদার খাবার প্রদান করতে হবে।

    উদাহরণঃ হিসেবে বলা যায় ধরুন আপনার একটি গরুর ওজন ২০০ কেজি সেই অনুযায়ী আপনার ওই গরুটিকে দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে দিনে ৪ কেজির মত। কিন্তু অবশ্যই দানাদার খাদ্য তে পানির পরিমাণ একে বারেই কম থাকবে। এমন পরিমাণে পানি দিতে হবে যেন দানাদার খাদ্যটি গরুর নাক পর্যন্ত না পৌঁছায়। গরুকে খাওয়ানোর শেষে বিশুদ্ধ পানি খাওয়াবেন। ২০০ কেজি ওজনের গরুটি কে দিনে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ লিটার পানি পান করাবেন।

    অবশ্যই এটি ওজনের ওপর ভিত্তি করে। দুগ্ধবতী গাভীর দানাদার খাদ্য তৈরি করতে হয় যে সকল উপাদান দ্বারা ভুট্টা ভাঙ্গা, ধান ভাঙ্গা, গম ভাঙ্গা, সোয়াবিনের খৈল, সরিষার খৈল, শুটকির গুড়া, ছোলা ভাঙ্গা, ডালের ভুষি এই সকল খাবার দাঁড়ায় দানাদার খাদ্য তৈরি করতে হয়। এখন কোনটা কোন পরিমাণে লাগবে দুগ্ধবতী গাভীর দানাদার খাদ্য তৈরি করতে তা নিচে নিম্নে তুলে ধরা হলো।

    আমিষ জাতীয় খাদ্যঃ আমরা মানুষেরা যে সকল আমিষ জাতীয় খাদ্য খেয়ে থাকি। সেই সকল আমিষ জাতীয় খাদ্য গরুকে দেওয়া যাবে না। গরুকে যে সকল আমিষ জাতীয় খাদ্য দিতে হবে তা হল গমের ভুসি, চালের ভুষি, ডালের ভুসি ও খৈল জাতীয় যে সকল খাদ্য রয়েছে।

    আউরঃ প্রত্যেক বয়সের গরুকে আউর খাওয়াতে হবে। আপনি চাইলে যে কোন খাদ্যের পাশাপাশি আউর অথবা শুধুমাত্র আউর খাওয়াতে পারেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরুকে দিনে কমপক্ষে ২ কেজি থেকে ৩ কেজি আউর খাওয়ালে সবচেয়ে উত্তম হয়।
    আশযুক্ত খাবারঃ আপনারা কি জানেন আশযুক্ত খাবার কোনগুলো। আপনার বাসার আশেপাশে যেমন কাঁঠালের পাতা, বরই পাতা, আউর, ভুষি, বিভিন্ন ধরনের ঘাস ও লতাপাতা এগুলো আশযুক্ত খাদ্য। অন্যান্য খাদ্যর পাশাপাশি প্রতিদিন গরুর খাদ্য তালিকায় ৫০% আশযুক্ত খাবার রাখতে হবে।

    বিশুদ্ধ পানিঃ আমরা সকলেই জানি পানির অপর নাম হচ্ছে জীবন। এই কথাটি সব প্রাণীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ পানি ছাড়া কোন প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই গরুকে সুস্থ ও সবল রাখতে প্রত্যেকদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। একটি গরুর ওজনের ১০% অনুযায়ী প্রতিদিন পানি পান করাতে হবে। উদাহরণস্বরূপ ৫০ কেজি ওজনের গরুকে দিনে পাঁচ লিটার পানি পান করাতে হবে।

    গাভীর দুধ বৃদ্ধির খাদ্য তালিকা

    আমার অনেক খাওয়ারই বন্ধুরা আছে যারা গরুকে নিয়মিত খাওয়াই কিন্তু গরুর দুধ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বিষয়টি হচ্ছে আপনারা যে সকল খাবার খাওয়াচ্ছেন সেগুলো থেকে দুধ উৎপাদন করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাচ্ছে না। তবুও গরু তাদের জাত হিসেবে দুধ দিয়ে থাকে।

    বিভিন্ন জাতের গরু বিভিন্ন পরিমাণে দুধ দিয়ে থাকে। আপনার যদি দেশি গরু হয় তাহলে কম পরিমাণে দুধ দেবে এটাই স্বাভাবিক। আর যদি অন্য কোন প্রজাতির গরু হয় যে পরিমাণে দুধ দেওয়ার কথা। সেই পরিমাণে আপনি দুধ পাচ্ছেন না। তাহলে আমি এমন প্রধান চারটি খাবারের কথা বলে দিবো। যে খাবারগুলো আপনি নিয়মিত খাওয়ালে গাভীর দুধ বৃদ্ধি পাবে।
    ১। গমের ভুষিঃ গমের ভুসি খাওয়ালে গরু যে পরিমাণে দুধ দিয়ে থাকে। তা হয়তো অন্য কিছু খাওয়ালে এই পরিমাণ দুধ দেয় না। আপনি যদি শুধুমাত্র গরুকে গমের ভুসি খাওয়াতে পারেন। তবুও গরুর দুধ বৃদ্ধি পেতে বাধ্য থাকবে।

    ২। কালাইঃ আপনার নাম শুনে হয়তো অনেকেই বুঝতে পেরেছেন অথবা চিনতে পেরেছেন। গাভীর দুধ বৃদ্ধি করার জন্য কাঁচা কালাই খাওয়াতে পারেন।

    ৩। ঘাসঃ গরুকে শুধুমাত্র ঘাস খাওয়ানোর মাধ্যমে দুধ বৃদ্ধি করা যায়। আপনি যদি গমের ভুষির পাশাপাশি ঘাস খাওয়াতে পারেন তাহলে আপনার গাভিটি প্রচুর পরিমাণে দুধ দিবে। আপনি যত ধরনের খাদ্যই খাওয়ান না কেন ঘাস খাওয়ানোর কোন বিকল্প নেই। কারণ ঘাসের মধ্যে পুষ্টিকর এমন কিছু উপাদান রয়েছে। যা আপনার গরুকে সুস্থ ও সবল থাকার পাশাপাশি গরুর দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

    ৪। দানাদার খাদ্যঃ আপনারা অনেকেই আছেন যারা গরুকে দানাদার খাদ্য দিয়ে থাকেন। দানাদার খাদ্যটি আসলে অনেকগুলো সুষম খাদ্যের মিশ্রণে গঠিত। যে খাদ্যটি গরুর অনেক ধরনের পুষ্টিকর ঘাটতি পূরণ করে। যা আপনার গরুর দুধ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও সুষম গঠনের অধিকারী হতে সাহায্য করে।

    গাভীর দুধ দোহন পদ্ধতি

    আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে গাভীর দুধ দোহন পদ্ধতি কোনগুলো। আসলে গাভী থেকে দুই ভাবে দুধ দোহন করা যায়। একটি হলো হাতের মাধ্যমে এবং অপরটি হল মেশিনের মাধ্যমে। বর্তমানে এখন আপনাদেরকে হাত দিয়ে কিভাবে গাভী থেকে দুধ দহন করা যায় সে বিষয়ে জানানো হবে।
    • সর্বপ্রথম আপনার দুই হাত ভালো ভালোভাবে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে নেন।
    • হাত ধুয়ে ফেলার পরে গামছা দিয়ে হাত মুছে ফেলুন।
    • এন্টিসেপটিক দিয়ে গাভীর দুধের ওলান পরিষ্কার করুন।
    • দুধ দোহনের পাত্রটি ভালো করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
    • গাভীর দুধের ওলানের নিচে দুধ রাখার পাত্রটি রাখুন।
    • অবশ্যই দুই হাত দিয়ে ওলান থেকে দুধ বের করতে হবে।
    • ওলান ধরে টানাটানি করবেন না চেপে ধরে আস্তে আস্তে নিচের দিকে টানুন।
    • দুধ দোহানোর সময় বেশি বেশি ওলান ছাড়া থেকে বিরত থাকুন।
    • প্রত্যেকদিন যে সময় দুধ দোহানো হয় ঠিক ওই সময়টাই নিয়মিত দুধ দোহাতে হবে।
    • দুধ দোহানোর পূর্বে অবশ্যই বাছুরকে তার মায়ের ওলান কিছুক্ষণ চাটতে দিতে হবে।

    গাভীর দুধ উৎপাদন কম বেশি হয় কেন

    আপনি গাভীর প্রতি যতটা যত্নশীল হবেন এবং তাকে পুষ্টিকর খাবার দিবেন। সেই গাভিটি তত বেশি আপনাকে দুধ প্রদান করবে। কিন্তু সেটার মধ্যে রয়েছে গাভীদের জাতের ভেদাভেদ বৈষম্যতা। আমার কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছে গাভীর দুধ উৎপাদন কমবেশি হয় কেন এই সম্পর্কে নিম্নলিখিত নিচে তুলে ধরা হলো।
    • প্রত্যেকটি গাভী বাছুর হওয়ার পরপর প্রচুর পরিমাণে দুধ দেয়। সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে।
    • বাছুর যখন গাভীর ওলান থেকে দুধ পান করে। তখন দুধ কম পরিমাণে পাওয়া যায়।
    • যে গাভীর যত বেশি বয়স সেই গাভিটি তত কম পরিমাণে দুধ প্রদান করে।
    • গর্ভকালীন সময় গাভীর প্রতি যত্নশীল কম হলে দুধ পরিমাণে কম বেশি হতে থাকে।
    • যেই গাভীর শারীরিক দিক থেকে সুষম গঠনের অধিকারী সেই গাভীটি দুধ পরিমাণে বেশি দেয়।
    • দুগ্ধবতী গাভীটির যদি কোন ধরনের রোগ থাকে তাহলে দুধ পরিমানে কম বেশি হতে পারে।

    দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা উপসংহার

    পরিশেষে বলা যায় যে প্রত্যেকটি গাভীর প্রতি সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একজন খামারি হতে হলে আপনাকে অবশ্যই কোন বিষয়টি গরুর জন্য ভালো হবে আর কোন বিষয়টি খারাপ হবে তার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। কি পরিমানে খাবার দিলে গাভী ভালো থাকবে। কখন গাভীটি অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। সুস্থতার জন্য কি কি করতে হবে এইগুলো বিষয়ে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।

    শেষ কথা

    প্রিয় পাঠক আশা করি ভালো আছেন। আপনারা ইতিমধ্যে দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পড়েছেন। আশা করা যায় এই তথ্যগুলো আপনাদের উপকারে আসবে। আর সত্যি যদি আপনাদের উপকারে এসে থাকে। তাহলে আরো যে সকল নতুন খামারি রয়েছে এবং পুরাতন খামারী রয়েছে তাদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করুন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url