মুলতানি মাটির উপকারিতা অপকারিতা - মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম

ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির উপকারিতা ও অপকারিতা জানার জন্য এদিক ওদিক খুঁজছেন। খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। কারণ এই মাটি আপনার ত্বকের জন্য অনেক কার্যকরী উপাদান। যেটি ব্যবহার করে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারেন।

আমরা সকলেই কমবেশি জানি ত্বকের উজ্জ্বলতায় মুলতানি মাটির বিকল্প নেই। তাই তো আপনারা মুলতানি মাটির ব্যবহারে নিয়ম ও চেনার উপায় জেনে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। মুলতানি মাটির শত বছরের ইতিহাস।

পোস্ট সূচীপত্রঃ 

মুলতানের মাটির ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। প্রাচীন সময়ে আমাদের মা ও বোনেরা মুলতানি মাটির উপকারিতা সম্পর্কে জানতেন। তারা এই মাটি ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করত। মুলতানি মাটির মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম সহ আরো অনেক উপাদান। যা ত্বক সহ চুলের উপকারিতায় ব্যবহার করা হয়। যত দিন যাচ্ছে এর ব্যবহার সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আপনিও যদি মুলতানি মাটির উপকারিতা পেতে চান।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চান। তাহলে মুলতানি মাটির চেনার উপায় ও মুলতানি মাটি ব্যবহার নিয়মগুলো জেনে। রূপচর্চায় ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আর দেরি না করে নিচে দেওয়া তথ্যগুলো পড়ে নিতে পারেন।

যুগে যুগে মুলতানি মাটির উপকারিতায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে আমাদের মা-বোনেরা। নিজেকে ব্যাহিকভাবে সুন্দর দেখানোর জন্য মুলতানি মাটির ব্যবহারের জুড়ি মেলা ভার। আপনিও যদি মুলতানি মাটি ব্যবহার করে নিজের ত্বককে সুন্দর করতে চান। তাহলে এর ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

কিন্তু অবশ্যই এই মাটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে এর ব্যবহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্ঞান থাকতে হবে। চিন্তার কোন কারণ নেই আমি এই তথ্যের মধ্যে মুলতানি মাটি কিভাবে ব্যবহার করলে আপনি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন। আর ত্বকে কিভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের যাবতীয় সমস্যাগুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

প্রত্যেকটি জিনিস অথবা উপাদানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অথবা অপকারিতা রয়েছে। ঠিক যেমনি ভাবে মুলতানি মাটির উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। কিন্তু এই মাটির উপকারিতার হার অনেক বেশি যদি আপনি সঠিক ব্যবহার করতে পারেন। প্রত্যেকটি জিনিসের উপকারিতা তার ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।

এমনকি এই মাটির উপকারিতা পেতে হলে মুলতানি মাটি চেনার উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ আসল মুলতানি মাটি চেনা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে আমি এ বিষয়ে এই তথ্য তে আলোচনা করেছি কিভাবে মুলতানি মাটি চিনতে পারবেন। তাই এই মাটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে চাইলে ব্যবহারটি জেনে নিন।

শত শত বছর ধরে মুলতানি মাটি ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীন যুগে মেয়েরা মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম মেনে তাদের ত্বকে ব্যবহার করত। এরই সূচনায় আজ পর্যন্ত মুলতানি মাটির ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে অনেক ধরনের ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। যেগুলো মেনে আপনি ত্বক সহ চুলেও ব্যবহার করে এর উপকারিতা পেতে পারেন।

১। ব্যবহারের নিয়মঃ এক চামচ করে মুলতানি মাটি, মধু ও আধা চামচ হলুদ একসাথে মিশিয়ে রাতের সময় ত্বকে মাখতে পারেন। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। তবে অবশ্যই প্রতি সপ্তাহে তিন বারের বেশি ত্বকে মাখবেন না। সপ্তাহে তিনবার মুখে মাখলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এই প্যাকটি ত্বকে দেওয়ার ৩০ মিনিট পর স্বাভাবিক ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

২। ব্যবহারের নিয়মঃ এক চামচ করে মুলতানি মাটি ও মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। যাদের শুষ্ক ত্বক রয়েছে তারা এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের শুষ্কতা ভাব দূরীভূত হতে সাহায্য করবে। প্যাকটি মুখে দেওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই মুখ ধুয়ে ফেলার পরবর্তী সময় মশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।

৩। ব্যবহারের নিয়মঃ শরীরে কোন জায়গায় যদি কাটা দাগ, ক্ষতস্থান ও রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুই থেকে তিন চামচ মুলতানি মাটির সাথে পরিমাণ মতো পানি অথবা দুধ ব্যবহার করে। ওই রক্ত চলাচল বন্ধ স্থানে লাগাতে পারেন। এতে করে রক্ত চলাচল সচল হতে পারে।

৪। ব্যবহারের নিয়মঃ এক চামচ করে মুলতানি মাটি ও টক দই নিতে হবে এর সাথে আধা চামচের একটু কম নারকেল তেল। তারপরে একটু পানির সাথে মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিন। মুখে দেওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৫। ব্যবহারের নিয়মঃ দুই চামচ মুলতানি মাটি, আধা চামচ লেবুর রস, তিন চামচ গোলাপ জল, আধা চামচ হলুদের গুঁড়ো এবং যাদের ত্বক শুষ্ক তারা এর মধ্যে এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এরপরে ভালো করে উপাদান গুলো পেস্ট করে নিন। মুখে দেওয়ার কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

মুলতানি মাটি নামকরণ কিভাবে হয়েছে কেউ কি জানেন। আসলে মুলতানি মাটি সর্বপ্রথম পাকিস্তানের মুলতান শহর থেকে পাওয়া যায়। যার কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছে মুলতানি মাটি। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর অনেক জায়গায় এই মাটির খোঁজ পাওয়া যায়।

কিন্তু খোঁজ পাওয়া গেলেই যে ওই মাটি আসল মুলতানি মাটি এটা কি আপনি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত। তাইতো আসল মুলতানি মাটি চেনার কিছু উপায় গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিবো। বর্তমানে বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা মুলতানি মাটির বদলে অন্য কোন মাটি বিক্রি করছে।

দেখে চেনার উপায় নেই যে এটি মুলতানি মাটি না। তবুও কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি মুলতানি মাটি চিনতে পারবেন।মুলতানি মাটি হাতে নিলে একটা আঠালো আঠালো ভাব অনুভব করা যায়। আসল মুলতানি মাটির কালার দেখতে অনেক সুন্দর এবং হলুদ রঙের।

এই মাটি থেকে অসম্ভব সুন্দর একটি সুগন্ধ বের হয়। এই মাটি কিনতে হলে অবশ্যই কোন সুনাম সম্পূর্ণ কোম্পানির কাছ থেকে কিনবেন। কিংবা কোন বড় সপ মার্কেটপ্লেস থেকে কিনতে পারেন। এই মাটির দাম ২০২৪ সালের অনুযায়ী ১০০ গ্রাম মুলতানি মাটির দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হতে পারে।

মুখে একটিও ব্রণ বের হয়নি এমন মানুষ খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়। এখন এটি একটি কমন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বয়সন্ধিকালে প্রায় সকলেরই ব্রণের সমস্যা দেখা যায়। এই ব্রণ নিয়ে চিন্তার কোন শেষ নেই। তাই আপনিও যদি ব্রণে বরণ নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন। আর যদি মুলতানি মাটি দিয়ে বরণ দূর করার নিয়ম টি জানতে চান। তাহলে এই ফেসপ্যাকটি আপনার ত্বকে ব্যবহার করে ব্রণ দূর করতে পারেন।

এক চামচ করে মুলতানি মাটি ও গোলাপজল সাথে কিছু চন্দনের গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে নিয়ম করে সপ্তাহে দুইবার ত্বকে ব্যবহার করুন। অবশ্যই ত্বকে ব্যবহারের ৩০ মিনিট পর ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপনার কাছে যদি চন্দনের গুঁড়ো না থাকে তাহলে এক চামচ হলুদের গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার মুখের ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

আমরা সকলে মুলতানি মাটিকে রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই মাটি চুলে ব্যবহার করা যায়। এতে করে আপনার চুলের রুস্কো খুশখো ভাব দূর হয়ে যায়। আর চুলে এক ধরনের সাইন করতে দেখা যায়। তাইতো অনেকে জিজ্ঞাসা করেছে বলতে মুলতানি মাটি তুলে দিলে কি হয়। মুলতানি মাটি চুলে দেওয়া মাত্রই এর ফলাফল দেখতে পাবেন। কিন্তু মাটি কিভাবে ব্যবহার করলে এর ফলাফল পাবেন জেনে নেই।

তারপরে ওই পেস্টকৃত মুলতানি মাটি মাথায় নেওয়ার পর ৩০ মিনিট রাখতে হবে। এরপরে কোনরকম শ্যাম্পু ছাড়াই পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে করে যদি আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার নিতে পারেন। তাহলে আপনার মাথার ইনফেকশন ও খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুল বাড়তে সহায়তা আর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

আপনাদের যাদের বয়স ১৫ বছরের অধিক হয়েছে তারা মুলতানি মাটি ও গোলাপ জলের ব্যবহার করে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারেন। এই প্যাক গুলো ছেলে ও মেয়ে উভয় ব্যবহার করতে পারবে।

১। এক চামচ করে মুলতানি মাটি ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করবে। অবশ্যই এই ফেসপ্যাকটি ত্বকে দেওয়ার ১৮ মিনিট পর ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখ ধাওয়ার পরবর্তী সময় মশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন।

২। তিন চামচ মুলতানি মাটির সাথে তিন চামচ গোলাপ জল এবং কিছু পরিমাণ গাজর ব্যবহার করে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। কিছু পরিমাণ গাজর নিয়ে ভালো করে বিলিন্ডারে অথবা পাটাতে পেস্ট করে নিন। কিন্তু অবশ্যই পানি ছাড়া পেস্ট করতে হবে। এরপরে এই তিনটি উপাদান একসাথে ব্যবহার করে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। একটি মুখে দেওয়ার পর ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর্যন্ত রাখুন। তারপরে মুখটি ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

১ চামচ করে টমেটোর রস, মধু, দুধ ও লেবুর রস এর সাথে ৪ চামচ মুলতানি মাটি ব্যবহার করে ভালো করে পেস্ট করে নিন। এরপরে পেস্টকৃত মুলতানি মাটি মুখে ব্যবহার করুন। মুখে দেওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তারপরে এর ফলাফল নিজ চোখে দেখতে পাবেন। যে ত্বকের কতটা মসৃণ এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

মুলতানি মাটি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আপনারা কি ভাবছেন। এটা কি সত্যি উপকারে আসবে আপনার। যদি আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে আমি বলব হ্যাঁ। আপনি যদি আসল মুলতানি মাটি এবং ব্যবহারের নিয়ম গুলো মেনে ব্যবহার করতে পারেন।

তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা, ত্বকের ব্রণ ও চুলের যত্নে উপকারিতা পাবেন। বর্তমান সময়ে মুলতানি মাটির চাহিদা অনেক বেশি। ছেলে ও মেয়ে উভয় এই মাটি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি প্রাকৃতিক উপাদান। চাইলেই এর ব্যবহার করে যে কেউ এর উপকার নিতে পারে।

প্রিয় পাঠক আশা করি ভাল আছেন। ইতিমধ্যে মুলতানি মাটির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং মুলতানি মাটি মুখে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে আশা করা যায় আপনার উপকারে এসেছে। আর সত্যিই যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার বন্ধু ও পরিবারকে তথ্যটি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেন। পুরো তথ্যটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।