মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

আপনি যদি মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানার জন্য খুজোখুঁজি করেন। তাহলে এখনি খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এবং এর ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। কারণ এখানে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যে তথ্যগুলো পড়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন।
মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মহিলা কখনো না কখনো প্রস্রাবে সময় জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভূত সমস্যাগুলো সম্মুখীন হয়েছেন। মহিলাদের প্রস্রাবের সময় যে জ্বালাপোড়া হয় সেটি কোন রোগ নয়। কিন্তু একাধারে কয়েকদিন সমস্যা হতে থাকলে রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ 

মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়

আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষেরই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়। ঠিক তেমনি ভাবে মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর কারণ হচ্ছে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মূত্রনালী ও ছিদ্রপথ ছোট হওয়ার কারণে সমস্যাটি বেশি হয়। আপনাদের কথা বিবেচনা করে নিম্নে মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করার কারণে মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হতে পারে। দিনে কমপক্ষে একজন স্বাভাবিক ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা উচিত।
  • অতিরিক্ত গরমের সময় পানির প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকার পরেও যারা কম পরিমাণে পানি পান করে তাদের প্রস্তাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই গরমের সময় বেশি বেশি পানি পান করুন।
  • আমরা যারা ইসলাম ধর্মের আছি তারা রোজা পালন করে থাকে। একজন ব্যক্তি যখন রোজা থাকে তখন দিনের শেষ ভাগে শরীরে হালকা পানির ঘাটতি দেখা দেয়। তখন মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে।
  • প্রস্রাবের চাপ আসলে প্রস্রাব সেরে ফেলা উচিত। কারণ প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করতে পারে।
  • কোন ঝাল জাতীয় জিনিস যদি মূত্রথলিতে স্পর্শ করে সে ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করতে পারে। এই জন্য সব সময় হাত ধৌত অবস্থায় রাখা উচিত।
  • ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে মূত্রথলিতে জ্বালাপোড়া করতে পারে। এইজন্য সবসময় মূত্রথলির আশেপাশের স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • মহিলাদের সহবাসের পরে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করতে পারে। এর কারণ হচ্ছে কোন একজনের মুত্রথলি অপরিষ্কার অবস্থায় থাকতে পারে।
  • আপনার শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করতে পারে।
  • মেয়েদের মূত্রথলে ও বায়ুপথ অনেক কাছাকাছি হওয়ার কারণে বায়ুপথের অনেক ব্যাকটেরিয়া মূত্রথলিতে বের হওয়ার জন্যও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন সময় প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • আপনার প্রস্রাব গার হলুদ রঙের বের হয় তাহলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হবে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নাই দু এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন কিছুক্ষণ পরে ঠিক হয়ে যাবে।

মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

কাঁচা হলুদঃ কাঁচা হলুদের রস ও আমলকির রস খাওয়ার মাধ্যমে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করতে পারেন। এক চামচ হলুদের রস, এক চামচ আমলকির রস ও এক চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার ১২ ঘন্টা পর পর খেতে হবে। এভাবে করে টানা চার সপ্তাহ খেতে পারলে ইনশাআল্লাহ প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

মিছরির পানিঃ মহিলাদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করার একটি ঘরোয়া উপায় হচ্ছে মিস্ত্রি ভেজানো পানি খাওয়া। দুই থেকে তিন চামচ মিস্ত্রির সাথে এক গ্লাস পানি মিশিয়ে দিনে দুইবার খেতে পারলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমে আসবে। কিন্তু অবশ্যই পদ্ধতিটি টানা ৩০ দিন মেনে চলতে হবে। সকালে একবার আর রাতে একবার খেতে হবে।

বিশুদ্ধ পানিঃ আমরা সকলেই জানি পানির অপর নাম হচ্ছে জীবন। পানি ছাড়া একটি দিন অতিবাহিত করা প্রায় অসম্ভব। আপনি যদি পানি কম পরিমাণে পান করে থাকেন। তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধবে। ঠিক তেমনি ভাবে মহিলাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কোন রোগ না হলেও এটি খুবই কষ্টদায়ক।
তাই আপনার যদি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সমস্যা থাকে তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে ৩ লিটার থেকে ৪ লিটার পানি পান করতে হবে। আর যদি গ্রীষ্মকালীন সময় অথবা অতিরিক্ত গরম পড়ে সেই সময়টা এর অধিক পানি পান করবেন। তাহলে আপনার প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থাকবে না।

লেবু পানিঃ আমাদের মধ্যে অনেকে আছি যারা লেবুর শরবত খেতে খুবই পছন্দ করি। বিশেষ করে গরমের সময় আমরা কম বেশি সবাই লেবুর শরবত পান করি। লেবু পানির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

এক গ্লাস গরম পানি হালকা উমা উমা গরম করে তার মধ্যে লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে খেতে হবে। কিন্তু চিনি ছাড়া খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। আপনি যদি চিনি ছাড়া লেবু পানি খেতে পারেন তাহলে এর কার্যকরী তো অনেক বেশি। তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে নিস্তার পেতে লেবু পানি পান করুন।

নিমপাতার রসঃ অনেকেই জানি নিমপাতা হচ্ছে বহুগুণ সম্পূর্ণ একটি ভেষজ। এটি অনেক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু সেই সকল রোগের ব্যাপারে আজকে কথা বলবো না।

মহিলাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করার জন্য নিমপাতার রস খাওয়া খুবই উপকারী। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে অথবা যেকোনো সময় নিমপাতার রস পান করা যায়। তাই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করতে নিমপাতার রস খেতে পারেন।

শাক সবজিঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার জন্য প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করতে পারে। আর শাক সবজি খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খাবারের তালিকায় প্রত্যেক দিন শাক সবজি রাখুন। শাক সবজি খাওয়ার মাধ্যমে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করা সম্ভব।

শসা ও লেবুর রসঃ আপনারা সবাই শসা ও লেবু দুইটি উপাদান চিনে থাকবেন। শসা এমনি খাওয়ার মাধ্যমে অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে শসার রস ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
দিনে একবার হলেও শসা ও লেবুর রস একসাথে মিস করে খেতে হবে। এভাবে করে একটানা এক মাস যদি খেতে পারেন তাহলে ইনশাআল্লাহ এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।

ডাবের পানিঃ ডাবের পানি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরকে ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই যাদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা রয়েছে তারা ডাবের পানি পান করতে পারেন।

তরল জাতীয় খাদ্যঃ যত বেশি তরল জাতীয় খাদ্য খেতে পারবেন তত শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। যেমন তরমুজ, আনারস, আখের রস এ সকল তরল জাতীয় খাদ্য খেতে পারেন। এতে করে আপনার এই সকল সমস্যা দূরীভূত করতে সাহায্য করবে।

পুদিনা পাতার রসঃ পুদিনা পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত ছত্রাক জনিত যে সকল পদার্থ রয়েছে সেগুলো নিসরিত হয়। অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করে। টানা ৩০ দিন প্রতিদিন সকালে খাওয়ার মাধ্যমে এর উপকারিতা পেতে পারেন।
যে সকল মহিলাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা রয়েছে তারা উপরে উল্লেখিত তথ্য গুলোর মাধ্যমে সমাধান করতে পারেন। তবুও যদি তিন দিন এভাবে জ্বালাপোড়া করতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেকে চিকিৎসা প্রদান করুন।

মহিলাদের প্রসাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত যায় কেন

  • কিডনি জনিত কোন সমস্যা থাকলে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত যেতে পারে।
  • কিডনিতে যদি টিউমার থাকে এই কারণটির জন্য রক্ত পড়তে পারে।
  • কিছু ধরনের ঔষধ রয়েছে যেগুলো খাওয়ার জন্য প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। যেমন ধরেন ইকোস্পেইন অথবা হার্টের কিছু ধরনের রয়েছে যেগুলো খাওয়ার মাধ্যমে রক্ত যেতে পারে।
  • ইউরেটারে কোন ধরনের সংক্রমণ অথবা ইউরেটরে টিউমার থাকলে সেই ক্ষেত্রেও রক্ত পড়তে পারে।
  • আপনার শরীরে এমন কোন রোগ রয়েছে যেটি কিডনির সাথে সংযুক্ত তাহলে সেক্ষেত্রে প্রস্রাবের মাধ্যমে রক্ত পড়তে পারে।
  • ইউরিনারি ব্লাডার কোন ধরনের সমস্যা থাকে যেমন টিউমার অথবা ইনফেকশন সেক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
  • ইউরেটর, মূত্রথলি, কিডনিতে পাথর জনিত সমস্যা থাকলে সে ক্ষেত্রে রক্ত পড়তে পারে।
  • যাদের ব্লাড প্রেসার এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপের সাথে মোকাবেলা করছে। কোন ওষুধ খেয়েও ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলে আসছে না। তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি হতে পারে।
মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া এবং রক্ত পড়ার বিষয়গুলো নিয়ে ঘাবড়ে যায়। ঘাবরানোর কোন কারণ নেই মোটামুটি সব রোগেরই প্রতিষেধক রয়েছে। আপনারও যদি এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে নিকটস্থ কোনো ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলুন। আর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা গ্রহণ করুন।

মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা

  • আপনার খাদ্য তালিকায় শুকনো খাবার বেশি থাকার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। যার ফলে এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
  • আপনার যদি বদহজম জনিত সমস্যা হয়ে থাকে। তাহলে প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা হতে পারে।
  • আপনি যদি মাত্র অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন এবং সেটি যদি শরীরের সহনশীল ক্ষমতা থেকে বেশি হয়ে যায়। তাহলে আপনার প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভূতি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করার জন্যেও সমস্যাটি হতে পারে।
প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ও ব্যথা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে থাকে। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা অনেক কিছু করে থাকি। কিন্তু অনেক সময় এর ফলাফল পাওয়া যায় না। আর এই জন্যই এই সকল সমস্যা অথবা লক্ষণ দেখা দিলে ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

উপসংহার মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রত্যেকটি মহিলাই কোন না কোন সময় প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার মতো যন্ত্রণাদায়ক বেদনার সাক্ষী হয়েছেন। তাই যাদের জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া যেসকল চিকিৎসার রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে সুস্থ হয়ে না উঠলে। আপনার নিকটস্থ কোনো ভালো ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। কারন এই সকল বিষয়গুলো খুবই সেনসিটিভ হয়ে থাকে। বেশি দেরি করলে এগুলো গুরুতর সমস্যায় রূপ নিতে পারে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করি ভালো আছেন। আপনারা ইতিমধ্যে মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে তথ্যগুলো জেনে উপকৃত হয়েছেন। আর এই তথ্যগুলো পড়ে যদি আপনার কোন উপকারে আসে অবশ্যই আপনার বন্ধু পরিবারের সাথে এই তথ্যটি শেয়ার করুন। পুরো তথ্যটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url