লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নিন

আপনি কি লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার জন্য এদিক-ওদিক খোঁজাখুঁজি করছেন। তাহলে খুজে খুজি বন্ধ করে লেবুর খোসার উপকারিতার পাশাপাশি এর সাথে জড়িত বিষয়গুলো জেনে নিতে পারেন। কারণ লেবুর খোসার মধ্যে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে যা সকলেরই জানা প্রয়োজন। তাহলে আর দেরি না করে পুরো তথ্যটি বিস্তারিত করে নিন।
লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতার সাথে খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নিন
লেবু রস খেতে পছন্দ করে না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। কিন্তু আমরা অনেকেই লেবুর রস খেয়ে লেবুর খোসা ফেলে দেয়। কিন্তু লেবুর খোসার মধ্যেও রয়েছে উপকার ও গুনাগুন। যা শুধু মাত্র খাওয়ার নিয়ম গুলো মেনেই পেতে পারেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ 

    সারসংক্ষেপ

    আমরা সকলেই জানি লেবুর রস খাওয়া শরীরের জন্য কতটা উপকারী। ঠিক তেমনি ভাবে লেবুর খোসা খাওয়ার মধ্যেও আছে অনেক উপকার। আমরা অনেকেই মনে করি হয়তো শুধু লেবুর রস খাওয়ার মধ্যে উপকারিতা রয়েছে। এই ধারণাটি একদম ভুল।যার কারণে আমরা লেবুর রস খাওয়ার পরে এর খোসা ফেলে দেই। কিন্তু প্রমাণিত হয়েছে যে লেবুর রসের থেকে লেবুর খোসার মধ্যে বেশি উপকারিতা রয়েছে। আর এই কথা শোনার পর থেকে মানুষ লেবুর খোসা খাওয়ার উপর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

    এই খোসার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ত্বক, চুল ও দাঁতের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের জন্য উপকারী। কিন্তু কেউ যদি লেবুর খোসা খাওয়ার নিয়ম গুলোর না মানে তাহলে অপকারিতা পাবেন। আর যদি নিয়মগুলো মেনে খেতে পারেন তাহলে উপকারিতা পাবেন। তাহলে লেবুর খোসা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিতে পারেন।

    লেবুর খোসা খেলে কি হয়

    লেবুর খোসা খাওয়ার মাধ্যমে নানান ধরনের উপকারিতা পাবেন। কারন লেবুর খোসার মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সাইট্রিক এসিড, ভিটামিন সি, ডি লিমোনিন ও ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক উপাদান। যা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দারুণ ভূমিকা পালন করে।
    এছাড়াও আরো অনেক রোগ রয়েছে যার প্রতিষেধক হিসেবে লেবুর খোসার ব্যবহার হয়ে আসছে। এর ব্যবহার কয়েক যুগ ধরে মানুষ করছে। শুধু এর উপকারিতায় যে আছে তা নয় এর অপকারিতা গুলোও রয়েছে। তাই তো লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নিন।

    লেবুর খোসার উপকারিতা

    ১। ত্বকের জন্য ভালোঃ লেবুর খোসা ত্বকের জন্য খুবই ভালো ও কার্যকরী। কারণ এই খোসার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি এর মত উপাদান। যা ত্বকের ক্ষতিকারক কোষগুলোকে বের করার পাশাপাশি ব্রুণ, ফুসকুড়ি, কালো দাগ ও কাটা দাগ দূর করতে পারে। লেবুর খোসার নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

    ২। চুল ভালো রাখেঃ লেবুর খোসা ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রে সমান ভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি যা চুলের গোড়া মজবুত ও চুল পড়া রোধ করতে দারুন কাজ করে। আরো চুলের উজ্জ্বলতা ও চুলের গ্রোদ্ধ করতেও সহায়তা করে। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই চুলের সমস্যার সমাধানে লেবুর খোসা ব্যবহার শুরু করে দিন।
    ৩। অতিরিক্ত ওজনের চিন্তা কমায়ঃ শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর জন্য লেবুর খোসা খেতে পারেন। লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে ডি লিমোনিন যা আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে কাজ করে থাকে। এছাড়াও লেবুর খোসাতে আছে ভিটামিন সি ও ফাইবার যেগুলো অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। তাই তো লেবুর খোসার শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।

    ৪। দাঁতের জন্য কার্যকরীঃ দাঁতের মাড়ির রক্ত পড়া বন্ধ ও মাড়ি মজবুত করতে লেবুর খোসা খেয়ে দেখতে পারেন। কারণ আপনি লেবুর খোসার মধ্যে পাবেন সাইট্রিক এসিড ও ভিটামিন সি যা এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য সহায়তা করে। এছাড়াও দাঁত পরিষ্কার, দাঁতের হলুদ ভাব, দাঁতে পোকা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্যও সাহায্য করে। তাই নিয়মিত লেবুর খোসা চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা লেবুর খোসা পেস্ট করে সকালে ও রাতে ব্রাশ করতে পারেন।

    ৫। হাড় মজবুতঃ অনেকের বয়সের কারণে শরীরের হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার অনেকের কম বয়সেও শরীরের হাড় দুর্বল হয়ে যায়। শরীরের হার মজবুত করার জন্য লেবুর খোসা খেতে পারেন। লেবুর খোসার মধ্যে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের মতো উপাদান আছে। যা হাড়ের ক্ষয় রোধ ও মজবুত করার জন্য দারুন উপকারিতা আছে। তাই নিয়মিত লেবুর খোসা খেয়ে এই উপকারিতাটি পেতে পারেন।

    ৬। মানসিক চাপঃ মানসিক চাপ থেকে নিস্তার পেতে লেবুর খোসার দারুন ভূমিকা রয়েছে। কেউ যদি নিয়মিত লেবুর খোসার ঘ্রাণ গ্রহণ করতে পারে তাহলে ধীরে ধীরে মানসিক চাপ কমে যাবে। কারণ লেবুর খোসাতে আছে সাইট্রাস ও ফ্লেভোনয়েড যা মানসিক চাপ কমাতে অনেকটাই সহায়তা করে।

    ৭। হজমের সমাধানঃ হজমশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে উপকারিতা। লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। যে কোন খাবার তাড়াতাড়ি হজম করতে ও মলত্যাগ সহজ করার জন্য সহযোগিতা করে।

    পাশাপাশি পেট ফাঁপা ও পেট ফুলে থাকা রোধ করতে চাইলে লেবুর খোসার শরবত খেতে পারেন। আবার বমি বমি ভাব দূর করার জন্য এই খোসার ঘ্রান নিতে পারেন। তাহলে দেখবেন বমি বমি ভাব দূরীভূত হয়ে গেছে।
    ৮। পায়ের জন্য উপকারঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের পা ফেটে যায়, পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়, পা জ্বালাপোড়া করে, পায়ের নখ পরিষ্কার করার জন্য ও পা পরিষ্কার নানান ধরনের সমস্যায় একটি মাত্র সমাধান হলো লেবুর খোসা। লেবুর খোসাকে পেস্ট করে অথবা পানির মধ্যে দিয়ে গরম করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকুন। ফলাফল হিসেবে সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।

    ৯। শরীরের জন্য উপকারঃ নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়ার ফলে শরীর থেকে টক্সিন ভাব, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের মতো বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে লেবুর খোসার মধ্যে আন্টি ব্যাকটেরিয়াল রয়েছে যা এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলে। তাছাড়া নিয়মিত লেবুর খাসা খেলে কিডনির পাথরের হাত থেকে রক্ষা করে। কারণ লেবুর খোসার মধ্যে আছে সাইট্রিক এসিড। যা কিডনিকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।

    ১০। ক্যান্সার প্রতিরোধঃ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে উপকারিতা। লেবুর খোসা নিয়মিত খাওয়ার ফলে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

    লেবুর খোসা খাওয়ার নিয়ম

    লেবুর খোসা খাওয়ার তেমন কোন নিয়ম নেই। আপনি যেইভাবে ইচ্ছা সেই ভাবেই খেতে পারেন। তবুও লেবু খাওয়ার কিছু নিয়ম জানা দরকার। তাহলে লেবু খোসা খাওয়ার কি কি নিয়ম রয়েছে তা জেনে নিন।
    দেড় থেকে দুই গ্লাস পানির মধ্যে কিছু পরিমাণ লেবুর খোসা গরম করে ফুটিয়ে নিন। তারপরে সেই পানিটি দিয়ে গলগল করতে পারেন। এতে করে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে ও দাঁত ভালো থাকবে।
    • একমুঠো লেবুর খোসা ভালো করে পেস্ট করে ত্বকে, চুল ও মুখে দিয়ে ব্রাশও করতে পারেন। তাহলে ত্বকের ও চুলের সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।
    • লেবুর খোসার শরবত খেতে পারেন। নিয়মিত লেবুর খোসার শরবত খেলে নানান রোগ শরীর থেকে পালিয়ে যায়। কিছু লেবুর খোসা কুচি কুচি করে কেটে ও হালকা পরিমাণ মতো চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।
    • লেবুর খোসার ঝাঁঝালো ঘ্রাণ নাক দিয়ে শ্রবন করতে পারেন। এতে করে মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশনের মতো হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করবে। বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে।
    কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার ও খাওয়া যাবেনা। তাহলে শরীরের নানা প্রকারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে সাইট্রিক এসিড ও আরো নানান উপাদান যার পরিমাণ শরীরে অতিরিক্ত হয়ে গেলে ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং সাবধানতার সাথে লেবুর খোসা ব্যবহার করতে হবে।

    লেবুর খোসার অপকারিতা

    প্রত্যেকটি জিনিস ব্যবহার ও খাওয়ার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখা উচিত। প্রত্যেকটি খাবারের কিছু না কিছু অপকারিতা থেকে যায়। এর কারণ মানুষের যে কোন জিনিস অতিরিক্ত ব্যবহার ও খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। তাই অতিরিক্ত লেবুর খোসা খাওয়ার ফলে অপকারিতা দেখা দিতে পারে। তাহলে লেবুর খোসা অপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিন।
    • অতিরিক্ত লেবুর খোসা দাঁতে ব্যবহার করলে দাঁত ক্ষয় হয়ে যেতে পারে।
    • বেশি পরিমাণে লেবুর খোসা মুখে বা ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের নানান ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
    • চাহিদার তুলনায় যদি বেশি খাওয়া হয় তাহলে পেটে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
    • লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড যা অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে গেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
    তাই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং লেবু খোসা খাওয়ার নিয়ম গুলো মেনে খান। তাহলে লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা পাবেন উপকারিতা গুলো থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়া আর তেমন কোন অপকারিতা পাওয়া যায়নি।

    লেবুর খোসার ব্যবহার

    আপনি কি জানেন লেবুর খোসার ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। আমাদের মায়েরা লেবুর খোসাকে নানান কাজে ব্যবহার করে আসছে। শুধু খাওয়ার কাজেই এই খোসা ব্যবহার করা হয় না। আরো নানান ধরনের কাজে এর ব্যবহার হয়ে চলেছে। তারই মধ্য থেকে কিছু ব্যবহার আজ আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হবে।
    • থালা-বাসন পরিষ্কারের জন্য লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন।
    • নতুন জামা কাপড়ের মার ভাঙ্গানোর কাজে লেবুর খোসা ব্যবহার করা হয়।
    • ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্যও লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন।
    • টয়লেট ক্লিনার হিসেবেও অনেকেই লেবুর খোসা ব্যবহার করে আসছে।
    • বাড়ির মেঝে পরিষ্কার করার জন্য নিয়মিত লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন।
    • আরো অনেক ছোটখাটো পরিষ্কার করার যে কাজগুলো রয়েছে তা করতে পারেন। কারণ লেবুর মধ্যে রয়েছে সাইট্রিক এসিড যা পরিষ্কার করার কাজে দারুন ভূমিকা পালন করে।

    শেষ কথা

    প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নিয়েছেন। আপনারা যদি এই তথ্যগুলো পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে দেরি না করে আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে এখনই শেয়ার করুন। আর তাদেরকেও লেবুর খোসার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার সুযোগ করে দিন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url