হাতিশুর গাছের পাতা শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে নিন
আপনি কি হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম গুলো জানার জন্য খোঁজাখুঁজি করছেন। সত্যি যদি হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম গুলো জানার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন। তাহলে এখনি এই গাছের খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতাগুলো বিস্তারিত তথ্য পড়ে নিতে পারেন। কারণ এর উপকার ও পুষ্টি গুনাগুন আপনাকে মুগ্ধ করবে।
অনেকর চেনা ও পরিচিত গাছের নাম হচ্ছে হাতিশুর। এই গাছটি চেনা ও পরিচিত হলেও এর উপকারিতা গুলো অনেকেরই অজানা। তাইতো এর উপকার ও গুনাগুন জেনে নিতে তথ্যটি বিস্তারিত পড়ে নিন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
হাতিশুর গাছ কি
অবহেলিত কিছু গাছের নামের তালিকা করা হলে তার উপরের দিকে যে নামটি পাওয়া যাবে তাহলো হাতিশুর। তবে আপনি যদি এর উপকারিতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে অবগত থাকতেন। তাহলে এই গাছটিকে অবহেলার চোখে দেখার কোনো কারণ থাকতো না। তাইতো দুই থেকে তিন ফুট লম্বা গাছটি কতটা কার্যকরী তা জানতে পারবেন।
এর পাতাগুলো গোলাকারের সবুজ রঙের হয়। গাছের ফুল হাতির সুরের মতো বাঁকানো তার উপরে ছোট ছোট ফুল জন্মায়। ফুলগুলোর রং সাদা কালারের হয়ে থাকে। ফুলের আশেপাশে কাটা কাটা লোম আকৃতির দেখা যায়। সাধারণ দেখতে এই গাছটির উপকারিতা গুলো অসাধারণ। আমরা অনেকেই হাতিশুর গাছের বিভিন্ন অংশ খাই কিন্তু উপকার পায় না।
আরো পড়ূনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
এর কারণ হচ্ছে নিয়ম না জেনে খাওয়া। হাতিশুর গাছের শিকড় থেকে শুরু করে পাতা পর্যন্ত খাওয়ার নিয়ম বা কিভাবে খেলে উপকার পাওয়া যাবে সেই বিষয়গুলো জানতে পারবেন। তাই তো হাতির সুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম এর পাশাপাশি উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নিন।
হাতিশুর গাছের পাতা ও শিকড় খেলে কি হয়
হাতিশুর গাছের শিকড়, মূল ও পাতা খাওয়ার মাধ্যমে অনেক প্রকারের উপকার পাওয়া যায়। গাছটিকে অবহেলার চোখে দেখা হলেও গাছের উপকারিতা গুলো অবহেলার চোখে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এর মধ্যে থাকা বিশেষ কিছু উপাদান শরীরের কামড়ের বিষাক্ত স্থান থেকে শুরু করে সর্দি, কাশি, জ্বর নিরাময় সম্ভব। তাইতো অনেকেই এই গাছটিকে খুঁজে বেড়ায়। তাহলে আর দেরি না করে হাতিশুর গাছের শিকড়, মূল ও পাতার উপকারিতা গুলো জেনে নিন।
হাতিশুর গাছের পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা
১। ছত্রাকঃ শরীরে বিষাক্ত ছত্রাকজনিত আক্রমণের কারণে ছোট ছোট চাকা চাকা আকারে বের হয়। গায়ের দেহের রঙের উপর ভিত্তি করে ফুটে উঠে যা হাতিশুর গাছের পাতা বেটে রস লাগিয়ে দিলে ভালো হয়ে যায়।
আরো পড়ূনঃ চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
২। ফোলা কমায়ঃ শরীরের আঘাত প্রাপ্ত স্থানগুলো ফুলে যায়। ওই ফোলা স্থানে হাতিশুর গাছের পাতা বেটে রসটুকু হালকা গরম করে যথাস্থানে লাগিয়ে দিন। ইনশাআল্লাহ স্থানটি নিরাময় হয়ে যাবে।
৩। বিষাক্ত স্থানঃ পোকামাকড় কামড়ানোর ফলে যথাস্থানটি বিষাক্ত হয়ে যায়। যার ফলে স্থানটিতে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয় ও ফুলে যায়। জ্বালাপোড়া ও ফোলা কমানোর জন্য হাতিশুর গাছের পাতা বেটে রস লাগাতে পারেন। ইনশাআল্লাহ জ্বালাপোড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
৪। কাশি ও জ্বরঃ হাতিশুর গাছের মূলের মধ্যে আছে কাশি ও জ্বর নিরাময়ের অপরূপ শক্তি। এই গাছের মূল এর সাথে পানি মিশিয়ে ফুটিয়ে নির্যাস তৈরি করে ফেলুন। কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে উমা উমা গরম থাকা অবস্থায় খেয়ে ফেলুন।
৫। সর্দিতে উপকারঃ শীত ও ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি বা ঠান্ডা লাগাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সর্দি নিমিষেই দূর করার জন্য নিরাময়ের প্রয়োজন। সেই নিরাময়ের জন্য হাতিশুর গাছের পাতা পাটাতে বেটে রস বের করে নিন। এরপরে টানা এক সপ্তাহ দিনে এক থেকে দুই বার ২ চামচ রস খান।
৬। দাঁতের মাড়ি ফোলাঃ দাঁতের মাড়ি ফোলার কারণে দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। এর জন্য হাতিশুর গাছ উপকারে আসবে। এই গাছ মূল ছিড়ে চিবাতে থাকুন। এটি আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।
৭। একজিমা নিরাময়ঃ একজিমা হচ্ছে চর্মরোগ যা নিরাময় যোগ্য আর এই রোগ অনেক ভাবে নিরাময় করা যায়। কিন্তু ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিরাময় করার জন্য হাতিশুর গাছের পাতা ব্যবহার করুন। এর জন্য গাছের পাতা ছিড়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে পাটাতে থেতলে নিন। তারপরে যথাস্থানে লাগিয়ে দিন।
আরো পড়ূনঃ লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা
৮। ক্ষতস্থান নিরাময়ঃ যদি শরীরের কোনো স্থান ক্ষত অথবা কেটে যায়। তাহলে হাতিশুর গাছের পাতা ব্যবহার করুন। কিছু পাতা ছিড়ে পরিষ্কার পানি ধোয়ার পরে থেতলে নিন। তারপরে কাঁটাযুক্ত স্থানে লাগিয়ে দিন। কিছু দিনের মধ্যেই স্থানটি ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৯। মুখের জন্য উপকারঃ ত্বক বা মুখ খুবই সেনসিটিভ জায়গা যা অল্প কিছু ছোঁয়া পেলেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখায়। তাই মুখে ব্রুণ ও কালো দাগ সহ নানান সমস্যা ফুটে ওঠে। তাই ঘরোয়া উপায় হাতিশুর গাছের পাতা ও কচি ডাল পেস্ট করুন। এরপরে আক্রান্ত স্থানগুলোতে লাগিয়ে দিন। তার দু'ঘণ্টা পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন অথবা গোসল করুন। সাবধান ভুলেও মুখে সাবান লাগাবেন না।
১০। চোখ পরিষ্কারঃ ত্বকের মত চোখ খুব নাজুক। যদি চোখ লাল হয় আবার মনে হচ্ছে চোখের ভিতরে কিছু ভিঞ্চে এর জন্য ঠিকভাবে চোখের পাতা খুলতে পারছেন না। তাহলে হাতিশুর গাছের পাতার রস আপনার জন্য উপকারে আসবে।
১১। টাইফয়েড জ্বরঃ হাতিশুর ব্যবহারের মাধ্যমে টাইফয়েড নিরাময় সম্ভব। আপনি যদি ঘরোয়া পদ্ধতির অন্যতম উপায় খুঁজে থাকেন। তাহলে হাতিশুর গাছের পাতা থেকে রস বের করে। তারপরে রসটুকু হালকা গরম করে পানির মধ্যে মিশিয়ে শরবত খেতে পারেন।
১২। মূত্রথলির ইনফেকশনঃ যদি প্রস্রাবের শেষে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাব বের হওয়ার সময় জ্বালাপোড়া, প্রস্রাব করার পরেও যদি মনে হয় যে প্রস্রাব বের হচ্ছে তাহলে হাতিশুর গাছে পাতার রস আপনার জন্য। হাতিশুরের পাতা ভাল করে বেটে রস টুকু বের করে নিয়ে তারপরে যদি খাওয়া যায়। তাহলে মূত্রথলির সমস্যা ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
হাতিশুর গাছের পাতা ও শিকড় খাওয়ার নিয়ম
হাতিশুর গাছ অনেকের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এই গাছটি যেমন বহু নামে পরিচিত ঠিক তেমনি এর উপকারিতাও বহুরূপী। কিন্তু পুষ্টি ও গুনাগুন সম্পূর্ণ এই গাছটি খাওয়ার নিয়ম না জানার অভাবে উপকারিতা গুলো পাই না। তবে এ বিষয় নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আরো পড়ূনঃ সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
আপনারা যদি এই গাছের শিকড়, পাতা, মূল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে থাকেন। তাহলে সেখানে উপকারিতা বলে দেওয়ার পাশাপাশি খাওয়ার নিয়ম গুলো বলে দেওয়া রয়েছে। তবুও যদি খাওয়ার নিয়ম গুলো না পড়ে থাকেন পড়ে জেনে নিতে পারেন।
- ফোলা স্থানে পাতার রস হালকা ওমা গরম করে লাগানো মাধ্যমে ফোলা কমে যায়।
- পোকামাকড় কামড়ানো বিষাক্ত স্থানে পাতার রস লাগাতে পারেন।
- হাতিশুর গাছের পাতার রস খেলে সর্দি ভালো হয়।
- পাতার রস একজিমা আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন।
- চোখের সমস্যায় পাতার রস ব্যবহার করুন।
- টাইফয়েড জ্বরের জন্য গরম পাতার রসের সাথে পানি মিশিয়ে খেতে পারেন।
- কাটাযুক্ত স্থানে হাতিশুর গাছের পাতা থেটলে লাগিয়ে দিন। ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
হাতিশুর গাছের অপকারিতা
হাতিশুর গাছের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম জেনেছি। কিন্তু পুষ্টি গুনাগুন সম্পূর্ণ এই গাছেরও অপকারিতা রয়েছে। তবে জেনে খুশি হবেন এই গাছের উপকারিতা গুলো এতটা ভয়ঙ্কর নয়। শুধু খাবার নিয়ম গুলো মেনে খেতে থাকলে।
এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন। আবার বেশি উপকারিতার লোভে ভুলেও অতিরিক্ত খাওয়া শুরু করবেন না। তাহলে অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো আঁকড়ে ধরবে। তাহলে কোন অবস্থায় বা অতিরিক্ত খেলে কি ক্ষতি হতে পারে।
- গর্ভবতী নারীদের হাতিশুরের শিকড়, পাতা, মূল ও কান্ড খাওয়ার খাওয়া যাবে না। আর যদি খেতে চান তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- এই গাছ ব্যবহারের ফলে এলার্জি জনিত সমস্যা হতে পারে। আর যদি হয় তাহলে গাছটি ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন।
- তাছাড়া আর এমন কোনো হাতিশুর গাছের অপকারিতা পাওয়া যায়নি। তবে যদি অতিরিক্ত খেতে থাকেন। তাহলে আরও অন্যান্য যে সকল অপকারিতা রয়েছে তা ধরা দিতে পারে।
হাতিশুর গাছের মূলের উপকারিতা
হাতিশুর গাছের মূল, পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা গুলো বিস্তারিত জেনে নিয়েছি। তবে হাতিশুরের তিনটি অংশের মধ্যে সবথেকে পাতাতে উপকারিতা বেশি। শিকড় খাওয়ার মধ্যে তেমন কোনো উপকারিতা পাওয়া যায়নি। হাতিশুর গাছের মূল খাওয়ার মাধ্যমে কয়েকটি উপকারিতা পেতে পারেন।
- নিয়মিত হাতিশুর গাছের মূল খাওয়ার মাধ্যমে কাশি ভালো হয়।
- আপনার যদি জ্বর থাকে তাহলে গাছটির মূল খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
- এই গাছের মূলকে দাঁতের মাড়ির সমস্যায় দারুণ উপকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।
হাতিশুর গাছ কোথায় পাওয়া যায়
হাতিশুর গাছগুলো কোথায় পাওয়া যেতে পারে। এই গাছগুলো কোনো নার্সারি অথবা দোকানে পাওয়া যায় না। এই গাছগুলো বিভিন্ন ঝোপের ঝার জঙ্গল বাড়ির আশেপাশে দেখতে পাওয়া যায়। সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। গাছগুলোকে আপনারা অবহেলার চোখে দেখে থাকেন। রাস্তার আশেপাশেও দেখতে পাওয়া যায় এই গাছগুলোকে। তাই চাহিদা অনুযায়ী সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
উপসংহার হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
পরিশেষে বলা যায় যে, হাতিশুর গাছের বিভিন্ন অংশের উপকারিতা গুলো লুফে নিন। কারণ ছোটখাটো যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে এই গাছের কার্যকারিতা অনেক বেশি। তাই তো বাসার আশেপাশে থাকা এই গাছটির প্রতি যত্নশীল হন। আর সেই গাছ আপনার বাসাতে একটি থেকে দুইটি রোপন করুন। যাতে করে যেকোনো সমস্যায় গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করতে পারেন।
শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক আশা করা যায় হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও এই গাছটির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত করে উপকৃত হয়েছেন। আর যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পাশে থাকা ব্যক্তিটিকেও এই সম্পর্কে অবগত করুন। যাতে করে তারাও এর উপকারিতা গুলো খাওয়ার মাধ্যমে লুফে নিতে পারে। পুরো তথ্যটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url