আকর্ষণীয় ১০টি খেলার নাম - ৬০টি খেলার নামের তালিকা
আপনি যদি আকর্ষণীয় ১০ টি খেলার নাম এর পাশাপাশি আরও কিছু খেলার নামের তালিকা জানতে চান। তাহলে এই পুরো তথ্যটি আপনার জন্য উপকারী হবে। কারণ এখানে ৬০ টির অধিক খেলার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলো খুবই আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় খেলা। তার সাথে আপনি খেলাগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারবেন। তাই পুরো তথ্যটি বিস্তারিত পড়ার মাধ্যমে আকর্ষণীয় ১০ টি থেকে ৬০ টি খেলার নাম জেনে নিন।
এখনো অনেকেই আছেন যারা খেলা প্রেমী। তাইতো খেলা প্রেমীদের উদ্দেশ্যে জনপ্রিয় খেলার নামের কিছু তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে অজানা কিছু খেলার নাম।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
খেলার নামের তালিকা
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেননা খেলাধুলার অনেক উপকারিতা আছে যা আমাদের জীবনের সাথে জড়িত। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে খেলাধুলা আমাদের ভেতর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক যুগের ছোয়ায় আজ আমরা উন্নত হয়েছি কিন্তু স্বাভাবিক জীবন যাপন ভুলে গেছি। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গেম দ্বারা আসক্ত।
মাঠেও যে খেলা যায় সেটা আমরা অনেকেই ভুলেগেছি। আর জানলেও বলি এত কষ্ট করে মাঠে গিয়ে খেলার কি দরকার। ঘরে বসেই তো অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের গেম খেলা যায়। কিন্তু মাঠে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলার মধ্যে যে মজা রয়েছে সেটা অনলাইনে কোথায়।
আপনি মাঠে গিয়ে খেলার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্ককে বিকাশিত করতে পারবেন। আচার-আচরণ কথা বলার ধরন সবকিছু শিখতে পারবেন। বর্তমান সময়ে কিভাবে মানুষের সাথে চলাফেরা করতে হয় তাও আপনাকে মাঠ শেখাবে। তাইতো জনপ্রিয় কিছু খেলার নামের তালিকা জেনে নিন।
১ - ৫ টি খেলার নাম
১। ক্রিকেটঃ পৃথিবীর অধিক জনপ্রিয় খেলার তালিকার মধ্যে ক্রিকেট রয়েছে। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে খেলাটির প্রচলন ও জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। ক্রিকেট খেলার ৪২ টি আইন রয়েছে। ক্রিকেট খেলার জন্য প্রয়োজন প্রত্যেকটি টিমে ১১ জন করে প্লেয়ার। খেলাটি টচের মাধ্যমে শুরু হয়। যেই টিম টচে জিতে সেই টিম সিদ্ধান্ত নিবে প্রথমে তারা ব্যাটিং করবে নাকি বোলিং করবে।
যদি ব্যাটিং করে তাহলে দুইজন ব্যাটসম্যানকে ক্রিজে নামাতে হয়। একজন স্ট্রাইকার অপর জন্য নন স্ট্রাইকার। আর বোলিং টিমের ১১ জন মাঠে নামবে। একজন উইকেট কিপিং করবে, একজন বোলিং করবে ও বাকি ৯ জন ফিল্ডিং মনোযোগ দিবে। বোলিং এর নিয়ম হচ্ছে যদি ৫০ ওভারের খেলা হয়। তাহলে একজন বোলিং সর্বোচ্চ ১০ ওভার করতে পারবে। সর্বনিম্ন কোনো বাধা ধরা নেই।
আর ২০ ওভারের খেলাতে একজন বোলিং সর্বোচ্চ ৪ ওভার করতে পারবে। আর সর্বনিম্ন কোনো বাধা ধরা নেই। সব শেষ টেস্ট ক্রিকেট ৫ দিনের যে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই খেলাতে সাধারণত একদিনে সর্বোচ্চ ৯০ ওভার বোলিং করা হয়। একজন বোলিংয়ের যত ওভার ইচ্ছা করতে পারবে। সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন কোনো বাধা ধরা নিয়ম নেই।
এই হচ্ছে তিনটি ফরমেটে ক্রিকেট খেলা। তবে আমাদের গ্রামগঞ্জে বা শহরে খেলার নিয়ম একটু ভিন্ন। ৫,৬,৮,১০ যে কয়টা প্লেয়ার থাকে সেই কয়টা নিয়েই খেলা শুরু করে দেয়। আমাদের দেশে খেলাটির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। মানুষের ইমোশনের সাথে খেলাটি জড়িয়ে থাকে।
২। কাবাডিঃ বাংলাদেশের জাতীয় খেলার নাম হচ্ছে কাবাডি। এছাড়াও শ্রীলংকা, ভারত, মায়ানমার ও নেপাল এই দেশগুলোর মানুষের মধ্যেও কাবাডি ছড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ গুলোতে কাবাডি খেলার জনপ্রিয়তা রয়েছে। শুধু গ্রামগঞ্জেই না বর্তমান সময়ে শহরের মধ্যেও এই খেলার প্রচলন দেখা যায়। কিন্তু একটা সময় শুধু গ্রামের মানুষের খেলাটির প্রতি চাহিদা বেশি ছিল।
শিশু, কিশোর, যুবক ও প্রাপ্তবয়স্ক সহ সকলেই কাবাডি খেলাকে পছন্দ করে। শুধু যে ছেলেরাই খেলাটিতে অংশগ্রহণ করতে পারে তা কিন্তু নয়। চাইলে মেয়েরাও কাবাডি খেলায় অংশ নিতে পারে। ১৯৭৮ সালে কাবাডি ফেডারেশন গঠন করা হয়। আপনি যদি এই খেলাটি নিয়ম গুলো না জেনে থাকেন। তাহলে কাবাডি খেলার কিছু নিয়ম জেনে নিতে পারেন।
- ছেলেদের জন্য মাঠ হবে ১২.৫০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার চওড়া।
- মেয়েদের ক্ষেত্রে মাঠের মাপ হচ্ছে ১১ মিটার লম্বা ও ৮ মিটার চওড়া।
- মাঠের মাঝামাঝি অংশে দাগ কাটতে হবে।
- প্রতিটি টিমে ১২ জন খেলোয়ারের নাম থাকবে। যার মধ্যে থেকে ৭ জন মাঠে খেলবে আর বাকি ৫ জন অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।
- অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ৩ জন মাঠে নামতে পারবে।
- খেলাটি ৫০ মিনিটের হয় যার মধ্যে ৫ মিনিটের বিরতি থাকে। যদি পয়েন্ট সমান থাকে তাহলে অতিরিক্ত দুই ধাপে ৫ মিনিট করে খেলা হয়।
- অতিরিক্ত সময় খেলার পরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তাহলে যেই দল অতিরিক্ত সময়ে প্রথম পয়েন্ট পেয়েছিল। সেই দল জয়ী বলে গণ্য করা হবে।
৩। ফুটবলঃ পৃথিবীতে যত ধরনের খেলা রয়েছে তার মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ফুটবল। এর বড় একটি কারণ হচ্ছে খেলাটি পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই পছন্দ করে। আর তার মধ্যে একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। গ্রামগঞ্জের মাঠে-ঘাটে শহরের মাঠে সব জায়গায় ফুটবল খেলা ছড়িয়ে রয়েছে। ৯০ মিনিটের খেলাটি সম্পূর্ণ উত্তেজনা পূর্ণ।
প্রত্যেকটা মুহূর্তে দর্শক খেলাটি উপভোগ করে। তাইতো জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে ফুটবল। এই খেলাটির জন্য প্রয়োজন একটা ফুটবল এবং ২ পাশে ২ টি গোল বার। প্রত্যেকটি টিমের খেলোয়ার খেলার জন্য মাঠে নামতে হয় ১১ জন। যেই দল বেশি গোল দিবে সেই দলটি জয়ী বলে ঘোষিত হবে।
তবে আমাদের গ্রামের খেলার নিয়ম হচ্ছে ইচ্ছে মতো প্লেয়ার আর সময়ের কোনো ঠিক নেই। এভাবে খেলে আমাদের কৈশোর ও যুবক সকল ধরনের বয়স কেটে যাচ্ছে।এই খেলার বিষয়ে আর কিছু বলার দরকার আছে বলে মনে করি না। কারণ এর জনপ্রিয় তাই আমাদের দেশের মানুষকে সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছে।
৪। ডাঙ্গুলিঃ বাংলাদেশ সহ ভারতেও এই খেলার প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশে খেলাটির প্রচলন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। গ্রামগঞ্জে হোক বা শহরে সকল জায়গায় কিশোর ও যুবক থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদেরও দেখা যায় খেলতে। ডাংগুলি খেলার জন্য প্রয়োজন একটি লাঠি যার সাইজ হবে ১ হাত বা ২.৫ থেকে ৩ ফুট আর ছোট একটা গুলি থাকবে যার সাইজ ৩ ইঞ্চি।
এই দুটোই গাছের ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়। লাঠিটা তৈরির জন্য ডালের ছাল উঠিয়ে পরিষ্কার করা হয়। আর গুলি বলতে ভুলি না এটি চারপাশে ছাল উঠিয়ে ২ মাথা সুন্দর করে চোখা করা হয়। আরো একটি জিনিসের প্রয়োজন সেটা হচ্ছে ছোট্ট একটা গর্ত যেখানে গুলিটা রেখে ডাং দিয়ে মারা হয়। প্রথমে গর্ততে রেখে ডাং দিয়ে গুলির উপর একটা বাড়ি মেরে হাওয়ায় উঠিয়ে নিতে হবে।
তারপরে সেই গুলিটির উপরে ডাং দিয়ে মারতে হবে। প্রতিযোগিতা হচ্ছে কে কত দূরে পাঠাতে পারে। তারপরে ওই ডাং দিয়েই দূরত্ব মাপা হয়। কিন্তু যে দূরত্বে পড়েছে সেখানেই থাকবে। বাকি যে খেলোয়াড়রা রয়েছে তারা গর্ত থেকে ডাং দিয়ে ছুড়ে মারবে যদি কারো ডাং গুলির উপরে লেগে যায় তাহলে বাদ। এভাবে করেই যুগ যুগ ধরে খেলাটির প্রচলিত হয়ে আসছে। এই খেলাটি খেলার জন্য নির্দিষ্ট করে কোনো প্লেয়ারের প্রয়োজন হয় না। সর্বনিম্ন ২ জন থাকতে হয় আর সর্বোচ্চের কোনো সীমানা নেই।
৫। গোল্লাছুটঃ গ্রাম বাংলার কিশোর কিশোরীদের কাছে অধিক জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে গোল্লাছুট। শুধু যে গ্রাম বাংলায় খেলা হয় তা নয় শহরেও এই খেলাটির প্রচলন রয়েছে। এই খেলাটির জন্য প্রয়োজন সর্বনিম্ন ৫ জন সর্বোচ্চে যতজন ইচ্ছা খেলা যায়। ২ টি দলে ভাগ হয়ে যেতে হয়।
প্রথমে একটি বৃত্তাকার গোল করতে হয়। তারপরে তার চারিদিকে যতদূর ইচ্ছা গোলাকারের সীমানা দিতে হয়। একদল হাতের সাথে হাত রেখে চেইন আকারে গোলকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকবে। আর প্রতিপক্ষ দল চারিদিকের সীমানা ঘিরে সীমানা রক্ষা করবে। যদি গোলকে কেন্দ্র করে ঘোরা কোনো খেলোয়াড় বিপক্ষ দলের কাউকে ছুঁয়ে দেয়। তাহলে সেই দলের খেলোয়াড় বাদ পড়বে।
এখন চেইন আকারে চারদিকে ঘূর্ণন কৃত দলটি যদি চেইন ছিড়ে নির্ধারিত সীমানা ছুঁয়ে ফেলে তাহলে ওই খেলোয়াড়টি পরবর্তী রাউন্ডে চলে গেল। তবে কাউকে যদি বিপক্ষ দলের খেলোয়াররা ছুঁয়ে দেয়। তাহলে সেই খেলোয়াড়টি বাদ হয়ে যাবে। এই ভাবেই খেলাটি চালিয়ে যেতে হয়।
৬ - ১০ টি খেলার নাম
৬। সাত চাড়াঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলার নাম হচ্ছে সাত চাড়া। এই খেলাটি হচ্ছে শিশু ও কিশোরদের জন্য জনপ্রিয়। সাত চাড়া খেলার জন্য প্রশস্ত জায়গার প্রয়োজন। সাথে থাকবে সাতটা গুটি যার সাইজ গোল আকারের হবে। একের পর এক ধাপে ধাপে সাতটা গুটি সাজিয়ে রাখতে হবে।
আর প্রয়োজন পড়বে একটি টেনিস বল। তারপরে নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বল দিয়ে সাতটা চাড়া ফেলতে হবে। অবশ্যই খেলার আগে দুটি দলে ভাগ হয়ে যেতে হবে। সর্বনিম্ন একটি দলে দুইজন থাকতে হবে। যদি নির্দিষ্ট দ্রুত থেকে বল মারার পরে কোনো একটিও চারা পড়ে তাহলে যে কয়টি চারা পড়বে তা নির্দিষ্ট টিমটি তোলার চেষ্টা করবে।
তোলার সময় যদি বিপরীত টিমের কেউ বল দ্বারা ওই টিমের কাউকে আঘাত করতে পারে। তাহলে সেই খেলোয়াড়টি বাদ পড়বে। যদি এভাবে করে কেউই না তুলতে পারে। তাহলে বিপক্ষ দল জয়ী বলে ঘোষিত হবে।
৭। মোরগ লড়াইঃ আমাদের গ্রাম-গঞ্জের দিকে এই খেলার প্রচলন বহু আগের শুধু তাই নয় শহরের দিকেও এই খেলার প্রচলন রয়েছে। কিশোর ও যুবকদের মধ্যে খেলাটি অতি জনপ্রিয়। আবার স্কুলগুলোর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হলেও খেলাটি রাখা হয়। খেলাটির জন্য প্রয়োজন পড়ে নির্দিষ্ট কিছু কিশোর ও যুবকের। প্রথমে ছোট করে গোল আকার বৃত্ত দেওয়া হবে।
ওই বৃত্তের মধ্যে সকল খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করবে। প্রত্যেকের ডান বা বাম হাত পিছন দিকে নিয়ে অপর হাতটি ধরতে হবে। যে হাতটি ধরছেন সেই হাতের নিচে যে পা থাকবে ওই পা টির তালু ধরে উঁচু করতে হবে মাজা সমান। এরপরে সকলেই একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করবে। যে পড়ে যাবে সে বাদ এভাবে করে সব শেষে যে টিকে থাকবে তাকে প্রথম বলে গণ্য করা হবে। এভাবে করে খেলাটি শেষ করতে হয়।
৮। বউচিঃ বউচি খেলাটি গ্রাম বাংলায় আরেকটি নামে বেশি পরিচিত সেটা হচ্ছে বউ চুরি। এই খেলা গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরেও খুবই পরিচিত। মেয়েদের মধ্যে খেলাটি বেশি জনপ্রিয়। এটি খেলার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বউচি খেলার জন্য দুটি দলে ভাগ হয়ে যেতে হয়। নির্দিষ্ট ভাবে খেলোয়ার সংখ্যা নির্ধারণ করা বা প্রয়োজন হয় না।
খেলাটির জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট দূরত্বে গোলাকার একটি বৃত্ত আর ১০ থেকে ১৫ ফুট দূরে সোজা একটি দাগ যে দাগের মধ্যে একদল খেলোয়ার থাকবে। আর বৃত্তাকারের আশেপাশে আরেক দলের খেলোয়াড় থাকবে। বৃত্তের মধ্যে থাকবে বউ যাকে ঘিরে থাকবে বা পাহারা দিবে বৃত্তের আশেপাশে থাকা খেলোয়াররা।
যাতে করে বউ পালিয়ে সোজা দাগ কাটা স্থানে মানে তার দলের কাছে না যেতে পারে বা ঘরে পালিয়ে না যেতে পারে। যদি পালিয়ে যাই তাহলে বিপরীত দল হেরে যাবে। কিন্তু তার আগে বউকে পালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দলটি লড়াই করার প্রয়োজন। আর লড়াই করার জন্য সেই দল থেকে একটি করে খেলোয়াড় কিৎকিৎ বা চি চি করে বউয়ের কাছে আসতে থাকবে।
যদি তার সামনে বিপরীত দলের খেলোয়াড়ের কাউকে ছুয়ে দেয় তাহলে সেই বাদ বা আউট হয়ে যাবে। আর যদি দম শেষ হয়ে যায় বিপরীত দলের কেউ তাকে ধরে ফেলে তাহলে সেই আউট বা বাদ হয়ে যাবে। মূল কথা যেভাবেই হোক বউকে পালিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
৯। গোস্ত চুরিঃ গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে আমাদের শহর অঞ্চলেও এই খেলার প্রচলন রয়েছে। খেলাটি ছেলে ও মেয়ে উভয় খেলতে পারে। এটি খেলার জন্য দুই দলে বিভক্ত হতে হয়। এটি খেলার জন্য নির্ধারিত কোনো খেলোয়ার সংখ্যা নেই। মানে প্রত্যেকটি দলে সমান খেলোয়াড় থাকবে কিন্তু নির্দিষ্ট করা নেই কত সংখ্যক খেলোয়াড় থাকতে হবে।
এটি খেলার জন্য খুব একটা জায়গার প্রয়োজন হয় না। প্রথমে সোজা একটি দাগ দিতে হয়। তারপরে ওই সোজাসুজি ১২ থেকে ১৬ ফিট দূরত্বে আরেকটি দাগ দিতে হয়। যেকোনো একটি সোজাসোজি দাগের মাঝ বরাবর ছোট গোলাকার বৃত্ত দিতে হয়। যার মধ্যে কয়েক টুকরা ইটের ছোট খোয়া থাকবে। যেটিকে গোস্ত বলে সম্বোধন করা হয়।
একদল গোস্তকে পাহারা দেয় অপর দল গোস্ত চুরির উদ্দেশ্যে কিৎকিৎ বা চি চি করে। যদি গোস্ত চুরির আসার উদ্দেশ্যে দলের খেলোয়াড়টি গোস্ত চুরি করে নিয়ে যায় তাহলে এক পয়েন্ট বা একটি গোস্ত চুরি করেছে। কিন্তু যদি দম ছেড়ে দেয় বা গোস্ত চুরি করে নিয়ে আসার সময় বিপরীত দলের খেলোয়াড় ধরে ফেলে তাহলে ওই খেলোয়াড়টি বাদ পড়বে বা আউট হবে। এভাবে করেই খেলাটি পরিচালনা হতে থাকে।
১০। কানামাছিঃ শিশু, কিশোর ও যুবক সবাই খেলাটি খেলতে পারে। কিন্তু শিশুদের মাঝে খেলাটির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এই খেলাটি ছেলে ও মেয়ে উভয় খেলতে পারে। খেলাটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়ার সংখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। উদাহরণ হিসেবে ৫ জন খেলাটিতে অংশগ্রহণ করেছে।
তাদের মধ্যে বাটাবাটি হলো যে যার নাম উঠবে তাকে একটি কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে দেওয়া হবে। আর বাকি সবাই তার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করবে। তাকে একটু করে ছুঁবে আর চিমটি কাটবে। যদি সে কাউকে ধরে ফেলে তাহলে তাকে পরবর্তীতে চোখ বেঁধে দেওয়া হবে। ঠিক এভাবেই খেলাটি পরিচালনা হতে থাকে।
১১ - ১৫ টি খেলার নাম
১১। লবণ বদনঃ আপনারা নিশ্চয়ই অনেকেই খেলাটির নাম শুনেছেন। কারণ খেলাটি যুবক, কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক সকলেই কোনো না কোনো সময় খেলেছে। এই খেলাটির জন্য প্রত্যেকটি দলে ৫ জন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন হয়। তারপরে কলাম বা লম্বালম্বি ভাবে তিনটি ঘর হবে এবং সারি আকারে দুইটি ঘর হবে মোট ছয়টি ঘর করতে হবে।
এক একটি ঘরের আকার র্যাকেট খেলার কোটের মত হতে হবে। তারপরে খেলা শুরু করার জন্য প্রত্যেকটি দাগে একটি করে খেলোয়াড় দাঁড়িয়ে থাকবে। আরেক দলের খেলোয়াড় একটি ঘরে আবদ্ধ থাকবে। তারপরে মাঝ বরাবর দাগে খেলোয়াড়টি শুরু থেকে দৌড়ে এসে এলার্মটি বেলুন বলে এপারে এসে দাঁড়াবে।
ততক্ষণে প্রত্যেকটি ঘরে বিপরীত দলের খেলোয়াড়রা ছড়িয়ে যাবে। সব শেষে যে ঘরটি রয়েছে সেটিতে ঢুকতে হবে। এর মধ্যে বিপরীত দলের খেলোয়াড় যদি কাউকে ছুঁয়ে দেয়। তাহলে সেই খেলোয়াড়টি বাদ বা আউট বলে গণ্য হবে। যদি কোনো একজন মেইন ঘরে ঢুকে পড়ে তাহলে সেই দলটি জয়ী ঘোষিত হবে।
১২। দড়ি লাফঃ দড়ি লাফ খেলার জনপ্রিয়তা সব জায়গাই রয়েছে। এই খেলাটি ছেলে ও মেয়ে উভয় খেলতে পারে। খেলাটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে খেলাটির প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। খেলাটির জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিমাণে দড়ি।
আর কিছু প্রয়োজন পড়ে না খেলার জন্য। এখন আপনি চাইলে শারীরিক চর্চার জন্য একা খেলতে পারেন। আবার অনেক জন একসাথে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেও খেলতে পারেন। উদাহরণ ৫ জনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করলে সেখানে কে কত সময় অথবা কে কতবার দড়ি দিয়ে লাফ দিতে পারে। যে বেশিক্ষণ বা বেশি বার লাফ দিতে পারবে সেই জয়ী।
১৩। কিৎ কিৎঃ মেয়েদের অনেকগুলো জনপ্রিয় খেলার মধ্যে একটি হচ্ছে কিৎকিৎ খেলা। এটি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যই উপযুক্ত খেলা। কিৎকিত খেলার জন্য প্রয়োজন শুধু জায়গা আর হাঁড়ির খোল ভাঙ্গা দিয়ে গুটি আর কিছু নয়। সর্বনিম্ন দুইজন এবং সর্বোচ্চ যত জন ইচ্ছা খেলা যায়। এটি খেলার জন্য ৬ থেকে ৮ টি ঘর করা হয়।
এরপরে গুটি দ্বারা খেলোয়াররা কিৎকিৎ অনুযায়ী দম দিয়ে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে ঘুঁটি নিয়ে যায়। যদি কোনো ঘরে গুটি নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটকে যায়। তাহলে সে ওইখানেই খেলা বন্ধ করে দিবে। আবার যখন সবার একই নিয়মে খেলা শেষ হবে। তারপরে আবার সে সুযোগ পাবে। এভাবে খেলা চলতে থাকে।
১৪। মার্বেলঃ এই খেলাটি সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে গ্রামের দিকে কিন্তু শহরেও এর জনপ্রিয়তা রয়েছে একটু কম। খেলাটি শুধুমাত্র ছেলেরাই খেলতে পারে। মার্বেল খেলাটিকে আঞ্চলিক ভাষায় আংটা বলা হয়। এই মার্বেল খেলাটিতে প্রয়োজন পড়ে আংটা আর খেলোয়ার সাথে ছোট একটি গর্ত যেটিকে পিল বলা হয়। তারপরে পিল থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে আংটা ফেলতে হয়।
যার আংটা পিলের যত কাছে থাকবে সেই প্রথমে মারবে। খেলাটি হচ্ছে এমন যে আপনি কারো আংটাতে মারার পরে যদি আপনার আংটা পিলের মধ্যে ফেলতে পারেন। তাহলে আপনি উত্তীর্ণ হয়ে যাবেন। এভাবে করে সবশেষে যে থেকে যাবে। সেই ব্যক্তিটি হেরে যাবে।
১৫। লুকোচুরিঃ ছোটদের মাঝে খেলাটির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। খেলাটির জন্য ঘরের আনাচে-কানাচে অথবা মাঠের ভিতরে থাকা দেয়ালের এপাশ উপাস শুধু লুকানোর জায়গা হলেই হবে। খেলাটির জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র খেলোয়াড়ের। এর জন্য নির্দিষ্ট ভাবে খেলোয়াড় সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। যতজন ইচ্ছা খেলা যেতে পারে।
শুধু একজন থাকবে যে সবাইকে খুঁজে বের করবে। যাকে সবার শেষে খুঁজে বের করবে সে আবার পরবর্তী সময় সবাইকে খুঁজে বের করবে। সে সবাইকে লুকানোর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের সময় দিবে সেটি হতে পারে ১ থেকে ৫০ বা ১০০। ঠিক এভাবেই খেলাটি খেলতে হয়। এই খেলাটি সকল বয়সের ছেলে ও মেয়ে খেলতে পারে।
১৬ - ২০ টি খেলার নাম
১৬। দৌড় খেলাঃ গ্রামগঞ্জে থেকে শুরু করে শহরেও এই খেলার পরিচিতি বেশ অনেক আগে থেকেই। যেকোনো ক্রিয়া প্রতিযোগিতা খেলাটি থাকবে। দৌড় খেলা ছেলে ও মেয়ে উভয় খেলতে পারে। যে কোনো বয়সের ব্যক্তিরা খেলতে পারবে। খেলাটির জন্য মাঠের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু খেলোয়াড় সংখ্যার কোনো নির্দিষ্ট করা নেই।
যত জন ইচ্ছা খেলতে পারবে। সবাই সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে ৫০ মিটার বা ১০০ মিটার দূরত্বে সীমানা দেওয়া থাকবে। প্রথম বাঁশিতে সবাই রেডি হবে দ্বিতীয় বাঁশি দেওয়ার পরে সবাই দৌড়াতে শুরু করবে। যেই ব্যক্তি সর্বপ্রথম সীমানা ছুঁতে পারবে। তাকে প্রথম বা জয়ী বলে ঘোষিত করা হবে।
১৭। চেয়ার খেলাঃ চেয়ার খেলা শহর হোক বা গ্রাম সব জায়গায় খেলাটির প্রচলন রয়েছে। এই খেলাটি আপনি বাড়িতে বসে থেকেও খেলতে পারবেন আবার বাহিরের যেকোনো জায়গায় খেলতে পারবেন। শুধুমাত্র প্রয়োজন সর্বনিম্ন দুইজন আর সর্বোচ্চ যতজন খেলা যায়। খেলাটির জন্য প্রয়োজন পড়বে চেয়ার ধরুন ৮ জন খেলোয়াড় রয়েছে। তাহলে ৭টি চেয়ারের প্রয়োজন হবে।
খেলাটির জন্য মিউজিক বাজানো হয়। মিউজিক যতক্ষণ বাঁচবে ততক্ষণ চেয়ারের চারিদিকে ঘুরতে হবে। যখনই মিউজিক থেমে যাবে তখন চেয়ারে বসে যেতে হবে। যেই ব্যক্তি কোনো চেয়ার পাবে না। সেই ব্যক্তি আউট বা বাদ হয়ে যাবে। তার সাথে একটি চেয়ার ও সরিয়ে ফেলতে হবে। এভাবে করে যেই ব্যক্তি সব শেষে টিকে থাকবে। সেই প্রথম বা জয়ী বলে ঘোষিত হবে।
১৮। লুডু খেলাঃ বসে থেকে যতগুলো খেলা রয়েছে। তার মধ্যে লুডু হচ্ছে অধিক জনপ্রিয়। এটি খেলার জন্য সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৪ জন প্রয়োজন হয়। প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের ৪ টি করে গুটি থাকবে। যেই ব্যক্তি সর্বপ্রথম ৪ টি গুটি ওট্ঠা করবে সেই প্রথম। এভাবে করে খেলাটি খেলতে হয়।
১৯। কেরাম খেলাঃ এই খেলাটিও সব বয়সের ব্যক্তি খেলতে পারে। খেলাটির জন্য প্রয়োজন সর্বনিম্ন দুইজন এবং সর্বোচ্চ চারজন ব্যক্তি। খেলাটির জন্য দুইটি দলে ভাগ হয়ে যেতে হয়। ১৪ টি করে গুটি থাকে। গুটির কালার সাদা ও কালো। চারিদিকে চারটি ছোট আকারে গর্ত করা থাকে। এই গর্তগুলোতে গুটিগুলো ফেলতে হবে। আর ফেলার জন্য গোলাকার বড় স্টিক দেওয়া হয়।
২০। ষোলগুটি খেলাঃ এটি খেলার জন্য সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দুইজন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন হয়। প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের ১৬ টি করে গুটি থাকে। যে সর্বপ্রথম ১৬ টি গুটি বাদ করে ফেলতে পারবে। সেই জয়ী বলে ঘোষিত হবে। এই খেলাটি আপনি যেখানে সেখানে বসে থেকে খেলতে পারবেন। আর খেলাটির জন্য অনেক বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। খেলাটি ছেলে ও মেয়ে উভয় খেলতে পারবে। আবার যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও খেলাটি খেলতে পারবে।
২১ - ৪০ টি খেলার নাম
- ফুটবল
- দাবা খেলা
- কার্ড খেলা
- মোরগী লড়াই
- হাই জাম্প
- লং জাম
- বালিস খেলা
- তিন গুটি
- নৌকা বাইচ
- গাম্ভু খেলা
- ইস্টারচু খেলা
- কলম খেলা
- চোর-পুলিশ খেলা
- ওপেনটি বাইস্কোপ
- এক্কাদোক্কা
- টায়ার খেলা
- স্লো সাইকেল রেস
- সাইকেল রেস
- বিস্কুট খেলা
- হাড়ি ভাঙ্গা খেলা
৪১ - ৬০ টি খেলার নাম
- পাঞ্জা লড়াই
- দাড়িয়াবান্ধা
- ইচিং বিচিং
- ব্যাঙ দৌড়
- তীর-ধনুক খেলা
- বাঘ বকরি খেলা
- বরফ পানি খেলা
- পুতুল খেলা
- এলোনটি বেলোনা খেলা
- সাঁতার খেলা
- ভলিবল
- বাস্কেটবল
- ব্যাডমিন্টন
- টেনিস
- চাকা দৌড়ানো
- হাঁস খেলা
- আতা পাতা
- লাঠি খেলা
- গোস্ত চুরি
উপসংহার
একটা সময় ছিল গ্রাম বাংলা ও শহরের মানুষ বিকেল হোক বা সকাল ছুটির দিন হোক বা এমনি দিনের বিকেল হোক খেলার মাঠে যেত। যেন খেলার মাঠকে তারা দ্বিতীয় বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে সকালে মাঠে যেত আর সন্ধ্যার সময় বাসায় পৌঁছাতো। সারাদিন খেলাধুলার মাঝেই সময় কেটে যেত। খেলাধুলার মাঝে কত ধরনের মত বিনিময় ও শরীরের উপকার হতো।
কিন্তু বর্তমানে মাঠের সংখ্যা কমে যাচ্ছে আর মাঠে যাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যেও অনিহা তৈরি হয়েছে। তারা এখন সারাদিন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত কারণ একটি ফোনের মাধ্যমে সকল কার্যক্রম করা যায়। খেলা দেখা থেকে শুরু করে খেলা পর্যন্ত সবকিছু। তাইতো বর্তমানে আধুনিক যুগে মাঠে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এর মাধ্যমে আমাদের মেধাবিকাশে সংশয় ঘটছে। তাই মাঠে গিয়ে খেলার মজাটা উপভোগ করুন।
শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় ১০ টি খেলার নাম পাশাপাশি খেলার নামের তালিকাগুলো জেনে খুশি হয়েছেন। এই খেলার নাম গুলো জেনে যদি মজা পেয়ে থাকেন। তাহলে আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে খেলা গুলো সম্পর্কে বলুন। যেন তারাও খেলার মাঠ কে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি ভাবতে পারে। পুরো তথ্যটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url