ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা ও কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয় জানুন

নিশ্চয়ই আপনি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা খুঁজে বের করার জন্য খোঁজাখুঁজি করছেন। কিন্তু কাঙ্খিত তথ্য কোথাও পাচ্ছেন না। তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডিম পাড়া মুরগির খাবারের তালিকা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। যেই খাবারগুলো আপনার মুরগিকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ডিম উৎপাদনে সহায়তা করবে। আবার খাবার তালিকার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগিগুলো তা জেনে নিতে পারেন।
ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা ও কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয় জানুন
    পোস্ট সূচীপত্রঃ 

    ভূমিকা

    আমরা সকলেই মুরগির খামারের মাধ্যমে লাভবান হতে চাই। কিন্তু না জেনে ও বুঝে মুরগির খামারের মাধ্যমে লাভবান হওয়া যায় না। প্রথমেই কারো কথা শুনে মুরগির খামার করার জন্য বেশি পরিমাণে ব্যয় করবেন না। প্রথমদিকে অল্প কিছু সংখ্যক মুরগি নিয়ে খামার শুরু করুন।

    তারপর আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা হওয়ার সাথে সাথে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। যে কিভাবে মুরগি পালনে লাভবান হওয়া যায়। এখন মূল কথা হচ্ছে ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা কিভাবে সাজালে মুরগি পুষ্টি হীনতাই ভুগবে না। আমরা সকলেই মুরগির ডিম থেকে লাভবান হতে চাই। কিন্তু মুরগি সঠিক খাবারের অভাবে অধিক পরিমাণে ডিম দিতে পারে না।

    যার শেষ পরিণতি হিসেবে খামারিরা হতাশ হয়ে পড়ে। তাই আজকে খামারি ভাইদের জন্য খাবার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যা সব ধরনের ডিম পাড়া মুরগির জন্যই প্রযোজ্য। তাহলে ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা কেমন হবে তা জেনে নিন।

    ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা

    আমরা অনেক খামারি ভাইয়েরা আছি যারা ডিম পাড়া মুরগিগুলোকে কোন খাবার দিলে ভালো হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগি। এইখানে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। ডিম পাড়ার সময় প্রত্যেকটি মুরগিকে তার চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
    আবার অতিরিক্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যাবেনা। এতে করে ডিম পাড়া মুরগিগুলো নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। ডিম কম দিবে এবং অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এই জন্য সব রকমের পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে মুরগিগুলোকে দিতে হবে। আমরা অনেকেই মুরগির পুষ্টির দিকের কথা চিন্তা করে লেয়ার লেয়ার ওয়ান ফিড দিয়ে থাকি।

    কিন্তু এই ফিড দেওয়ার ফলে খামারিদের অনেক খরচ পড়ে যায়। তাইতো আজকে কম খরচে পুষ্টিকর বা লেয়ার ফিটের মত পুষ্টিকর খাবার কিভাবে তৈরি করব। যা খেলে ডিম পাড়া মুরগি আগের তুলনায় বেশি ডিম দিবে এবং মুরগির পুষ্টির কোন ঘাটতি থাকবে না। তাহলে আর দেরি কেন, ডিম পাড়া মুরগির খাবারের তালিকা গুলো কি কি তা জেনে নিন।
    • সরিষার খোল ১৮০ গ্রাম তবে খোলটি ভালোভাবে গুড়া করে নেবেন
    • ডিমের খোসা ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত তবে খোশাগুলো ভালো করে গুড়া করে নেবেন
    • চালের খুঁদ ভাঙ্গা ২৮০ গ্রাম নিতে হবে
    • গমের পরিমাণ ৩.৫০ কেজি
    • গমের ভুসির পরিমাণ ২.৩০ কেজি
    • শুটকি মাছের গুড়ার পরিমাণ ১ কেজি
    • ধানের গুড়ার পরিমাণ ২.৪০ কেজি
    • ধানের পরিমাণ ৪.৭০ কেজি
    • ভুট্টার ভুসি বা ভাঙ্গা পরিমাণে ২ কেজি
    • সরিষার দানার পরিমান ২২০ গ্রাম
    • ভিটামিন বি১ ও বি২ দিতে হবে
    এইভাবে করে কম খরচে আপনি ভাল মানের খাবার তৈরি করতে পারবেন। যেগুলো খাওয়ার পরে মুরগিগুলো ভালো মানের ডিম দেওয়া শুরু করবে। আপনি চাইলে এই খাবারগুলোকে একসাথে মিশিয়ে পানি দিয়েও খাওয়াতে পারেন। আবার শুকনো আকারেও খাওয়াতে পারেন।

    ডিম উৎপাদনকারী মুরগির বৈশিষ্ট্য

    আমাদের মুরগি পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লাভবান হওয়া। আর লাভবান হতে চাইলে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মুরগির ডিম। কারণ একটি খামারি খামার শুরু করে লাভের উদ্দেশ্যে। কিন্তু মুরগি মুরগির খামারের মাধ্যমে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাহলে কেউ মুরগি পালনের দিকে আগ্রহী হবে না। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন যে এই মুরগিটি ডিম দেওয়ার জন্য উপযুক্ত। এই জন্য ডিম উৎপাদনকারী মুরগীর বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি তা জেনে নিতে পারেন।
    • ডিম পাড়ার আগে প্রত্যেকটি মুরগির আচার-আচরণ একটু ভিন্ন রকমের হয়। কারণ ডিম দেওয়ার আগে যেকোনো মুরগি তার সঠিক স্থানটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।
    • যদি মুরগির ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে মাথার ঝুঁটি ও মুখ লাল হয়ে যায়।
    • ডিম পাড়া মুরগির চোখ পরিষ্কার থাকে এবং অনেক রাগান্বিত এবং ছটফট অবস্থায় ঘোরাফেরা করে।
    • মুরগি প্রথম যেই ডিম দিবে সেটির কালার যদি সাধারণ অন্য সকল ডিমের মতো না হয়। তাহলে বেশি দিন ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
    • মুরগি যেই পরিমাণে খাবার খাবে তার কাঙ্খিত পরিমাণে যদি ডিম না দেয়। তাহলে ওই মুরগি পালনে লাভবান হওয়া যাবে না।
    • মুরগি সাধারণত অল্প বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। যদি কোন মুরগি ডিম দিতে বেশি সময় নেই তাহলে ওই মুরগি পালনে তেমন লাভবান হওয়া যাবে না।
    • ডিম দেওয়া মুরগির আগের তুলনায় খাবারের প্রতি চাহিদা একটু বেশি থাকে।

    সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি

    এমন ছয়টি জাতের মুরগির নাম শুনবেন যেগুলো সবচেয়ে বেশি ডিম দেওয়া মুরগিগুলোর তালিকায় উপরের দিকে। আবার এই মুরগিগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি। পাশাপাশি মুরগি গুলো যেকোনো তাপমাত্রাতে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম।
    সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি
    শুধু তাই নয় এই মুরগিগুলো বছরে এতগুলো ডিম দেয় যে শুনে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আপনি এমন মুরগির নাম শুনবেন যে মুরগিগুলো দেখেছেন অথচ তার নামগুলো জানেন না। আজকে আপনারা দুটোই সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। তাইতো সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি তা জেনে নিন।
    • অস্ট্রালপঃ এই মুরগির অস্ট্রালপ নাম হওয়ার কারণ প্রধানত অস্ট্রেলিয়া থেকে উৎপত্তি হওয়ার কারণে যার শারীরিক ওজন সাড়ে তিন কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মুরগিটি প্রায় বছরে ২৭০ টির মতো ডিম দিতে সক্ষম।
    • ফাউমি মুরগিঃ এই মুরগিটি দেখে অনেকেই মনে করে দেশি মুরগি আসলে তা নয় এটার উৎপত্তিস্থল মিশর। জেনে অবাক হবেন এই মুরগিটি বছরে প্রায় ৩০০টির মতো ডিম দিয়ে থাকে। এর শারীরিক গঠন অনুসারে প্রায় ৩ কেজির মত ওজন হয়।
    • সাসেক্স মুরগিঃ গোলগাল দেখতে এই মুরগিটির উৎপত্তিস্থল হচ্ছে ইংল্যান্ড। যা বছরে প্রায় ২৮০টির মত ডিম দিয়ে থাকে। এই মুরগির ওজন প্রায় তিন কেজি। আর মুরগিটি দেখতেও অনেক সুন্দর।
    • আই এস এ ব্রাউন মুরগিঃ এই মুরগিটির গায়ের রং বাদামি আর এটির উৎপত্তিস্থল হচ্ছে ফ্রান্স। এই মুরগিটি বছরে প্রায় ৩৩০টির মত ডিম দিয়ে থাকে। কিন্তু এর শারীরিক ওজন খুবই কম প্রায় ২.৫ কেজির মত হয়ে থাকে। যা অন্যান্য মুরগির তুলনায় খুবই কম।
    • রোড আইল্যান্ড রেডঃ রোড আইল্যান্ড রেড হয়তো এই মুরগির নাম অনেকেই আজ প্রথম শুনছেন। কিন্তু আপনি মুরগিটি ফার্মে দেখে থাকবেন। মুরগিটি বাদামি রঙের দেখতে হলেও এর উৎপত্তিস্থল কিন্তু আমেরিকা। জেনে আরো অবাক হবেন যে, এটি বছরে প্রায় ৩২০টির মত ডিম দিয়ে থাকে। এর শারীরিক গঠন অনুসারে ওজন হচ্ছে প্রায় ৩ কেজির কাছাকাছি এর বেশিও হতে পারে।
    • হোয়াইট লেগহর্নঃ হোয়াইট লেগহর্ন নাম শুনে হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে মুরগিটির গায়ের রং সাদা। আর মুরগিটির উৎপত্তিস্থল হচ্ছে ইতালি। জেনে খুশি হবেন যে মুরগিটি বছরে প্রায় ৩০০টির মত ডিম দিয়ে থাকে। এই মুরগির ওজন প্রায় ৩ কেজির মত হয়।

    ডিমের জন্য কোন মুরগি ভাল

    আমরা সকলেই ফার্মে হোক আর বাড়িতে হোক মুরগি পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিম। কারণ একটি মুরগি সঠিক পরিমাণে ডিম না দেয় তাহলে পালনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই জন্য মুরগি পালনের আসল ফোকাস হচ্ছে ডিম। এখন কোন মুরগি ডিমের জন্য সবচেয়ে ভালো। এর তালিকার মধ্যে রয়েছে তিনটি ফাউমি, লেয়ার ও দেশি মুরগি।

    তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় ফাউমি মুরগি তারপরে লেয়ার সবশেষে দেশি মুরগি। একটি ফাউমি মুরগি তিন বছর পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে এমন কি ৩০ দিনে ৩০টি ডিম দিতেও সক্ষম। তার তুলনায় লেয়ার মুরগি কম ডিম দেয়। একটি লেয়ার মুরগি ১৮ মাস পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। এখন আসি দেশি মুরগির কথায় আমাদের সকলেরই পরিচিত বাড়িতে হোক বা ফার্মে হোক সব জায়গায় এই মুরগি দেখা যায়। কিন্তু ফাওমি ও লেয়ার মুরগির তুলনায় অনেক কম ডিম দেয়।

    একটি দেশি মুরগি মাসে ১৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। কিন্তু এই মুরগিগুলো ডিম খেতে অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টি গুনাগুন সম্পন্ন। আর এই মুরগি অন্যান্য ডিমের থেকেও দাম বেশি পাওয়া যায়। এজন্য ফার্মে হোক অথবা বাড়িতে হোক এই মুরগি পালন করতে পারেন।

    ডিম পাড়া মুরগির সম্পর্কে FAQ

    ১। সোনালি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়?
    উওরঃ সাধারণত সোনালি মুরগির ডিম দিতে একটু সময় লাগে। এই মুরগি ১৪০ থেকে ১৫০ দিনের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করে।

    ২। দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়?
    উওরঃ সাধারণত দেশি মুরগির ডিম দেওয়ার জন্য বয়স হতে হয় ১৮০ দিন। এরপর থেকেই দেশি মুরগির ডিম দেওয়া শুরু করে।

    ৩। ফাউমি মুরগি বছরে কতটি ডিম দেয়?
    উওরঃ ফাউমি মুরগি বছরে প্রায় ৩২০ টি থেকে ৩৩০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। যা অনেক মুরগির তুলনায় অনেক বেশি।

    ৪। টাইগার মুরগি বছরে কতটি ডিম দেয়?
    উওরঃ টাইগার মুরগি বছরে প্রায় ১৯০ টি থেকে ২০০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে।

    ৫। লেয়ার মুরগি কতদিন ডিম দেয়?
    উওরঃ সাধারণত একটি লেয়ার মুরগি প্রায় ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়।

    ৬। লেয়ার মুরগি বছরে কতটি ডিম দেয়?
    উওরঃ সাধারণত একটি লেয়ার মুরগি বছরে প্রায় ৩০০ টি থেকে ৩২০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে।

    উপসংহার

    পরিশেষে বলা যায় আমরা সকলেই চাই, যেন খামার তৈরি করে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু কিছু ভুল ত্রুটির কারণে আমরা অনেকে লাভবান হতে পারি না। বিশেষ করে মুরগি পালনে যদি ডিম দিক থেকে লাভবান না হওয়া যায়। তাহলে মুরগি থেকে তেমন লাভবান হওয়া যাবে না। তাই তো ডিম পাড়া মুরগির সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্যগুলো বিস্তারিত পড়ুন। সেই বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে তারপরে ডিম পাড়া মুরগিগুলোকে খাবার প্রদান করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি খামারের মাধ্যমে লাভবান হবেন।

    শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক, আপনি যদি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত পরে উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার আশেপাশের খামারি বন্ধুদেরকে এর তালিকা গুলো জানিয়ে উপকৃত করুন। যেন তারাও খামার ব্যবসায় লাভবান হতে পারে। পুরো তথ্যটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url