সরিষার তেল মালিশের উপকারিতা ও ত্বকের যত্ন জানুন

আপনি যদি সরিষার তেল মালিশের উপকারিতা গুলো জানার জন্য খোঁজাখুঁজি করে থাকেন। কিছুক্ষণের জন্য খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে সরিষার তেল মালিশ ও ত্বকের জন্য উপকারিতা জেনে নিতে পারেন। পাশাপাশি আরো অনেক উপকারিতা জানতে পারবেন যেমন রান্না করে খাওয়ার ও চুলের উপকার পুষ্টি গুনাগুন বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে দেরি না করে সরিষার তেলের মালিশের উপকারিতা ও গুনাগুন জেনে নিন।
সরিষার তেল মালিশের, চুলের ও ত্বকের বিশেষ উপকারিতা জানুন
আমরা অনেকে মনে করি সরিষার তেলের কোনো উপকারিতা নাই। এই ধারণাটি পোষন করা ভুল। সরিষার তেলের মধ্যেও অনেক উপকার ও পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। যা শুধুমাত্র ব্যবহারের করে পাওয়া যায়।
পোস্ট সূচীপত্রঃ 

    ভূমিকা

    একটা সময় গ্রাম বাংলার মানুষেরা সরিষার তেল ছাড়া অন্য কোনো তেল চিনতও করতো না। তখন রান্না করে খাওয়া থেকে শুরু করে রূপচর্চা ও চুলেও ব্যবহারের জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করতো। আমাদের দেশে সরিষার তেলের ইতিহাস প্রায় শত বছরের। তখন বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সকলেই সরিষার তেল ব্যবহার করতো।

    কারণ সরিষার তেলের গন্ধ তাদেরকে মুগ্ধ করত পাশাপাশি তারা সরিষার তেল ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক উপকার পেতো। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই বলে সরিষার তেলের মধ্যে কোনো উপকারিতা নেই। সরিষার তেল ত্বক বা মুখে ব্যবহার করলে মুখ কালো হয়ে যায়। কিন্তু সরিষার তেল রান্না করে খাওয়া ও মালিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে উপকারিতা পাবেন। তাই সরিষার তেলের ব্যবহারের যে উপকারিতা গুলো পাবেন তা জেনে নিন।

    সরিষার তেল খেলে কি হয়

    সরিষার তেল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা অনেক প্রকারের উপকারিতা পেতে পারি। কারণ সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ই, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও আরো অনেক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
    যেগুলো ত্বক ও চুল সহ আরো নানা প্রকারের উপকারিতা লুকিয়ে থাকে। তাইতো বিশেষজ্ঞরা সরিষার তেল খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাহলে সরিষার তেলের মালিশের উপকারিতা পাশাপাশি চুল ও ত্বকের উপকারিতা জেনে নিন।

    সরিষার তেল মালিশের উপকারিতা

    আমরা যারা সরিষার তেল নিয়মিত ব্যবহার করি। বিশেষ ভাবে যারা সরিষার তেল শরীরের বিভিন্ন অংশ মালিশের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। তাদের জন্য শরীরের যথাস্থানগুলোর উপকারিতা রয়েছে। কারণ সরিষার তেল মালিশে আরাম পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের সমাধান দেয়।

    শুধুমাত্র এর ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। তাহলেই সরিষার তেলের যে উপযুক্ত মালিশের উপকারিতা রয়েছে। তার যথাযথভাবে আপনার কাছে এসে ধরা দিতে বাধ্য তাই সরিষার তেল মালিশের উপকারিতা গুলো জেনে নিন।
    ১। হাটু ও মাজা শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথায় আমরা কাতর হয়ে যায়। এই ব্যাথা থেকে আরাম পেতে সরিষার তেল মালিশ করতে পারেন। এটি আপনাকে তৎক্ষণাৎ আরাম দিতে পারে।

    ২। সরিষার তেল গরম করে শরীর মালিশ করার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে পারেন। শরীরের বিভিন্ন স্থান সরিষার তেল গরম করে মালিশ করুন। এতে করে আগের তুলনায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে।

    ৩। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার ক্ষেত্রে সরিষার তেলের মালিশ নিতে পারেন। এর জন্য সরিষার তেলটি গরম করুন তারপরে যে স্থানগুলোতে ব্যথা রয়েছে। গরমকৃত তেল দিয়ে মালিশ করতে থাকুন। ব্যথা আপনার কাছ থেকে দূরে পালিয়ে যাবে এবং আরাম দিবে।

    ৪। সর্দি, কাশি ও জ্বরের ক্ষেত্রে সরিষার তেলের মালিশের মধ্যে উপকারিতা লুকিয়ে রয়েছে। আপনি জেনে খুশি হবেন যে, সরিষার তেল গরম করার পরে তার মধ্যে আধা চামচ কালোজিরা দিয়ে শরীরের এপাশ ওপাশ মালিশ করার মাধ্যমে এই আরোগ্য গুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

    ৫। শীতের সময় সরিষার তেলের কার্যকারিতা কোনো বিকল্প নেই। শীতে সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করলে শরীরকে গরম রাখতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত সরিষার তেলের মালিশ নিলে শীতের সময় হওয়া অনেক রোগের থেকে দূরে থাকা যায়।

    ত্বকে সরিষার তেলের উপকারিতা

    যেকোনো ত্বকের জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। এর কার্যকরিতা এতটাই বেশি যে ত্বকে থাকা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। কারণ সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই ও ম্যাগনেসিয়াম এর মত কার্যকরী উপাদান। এই উপাদানগুলো আপনার ত্বককে প্রটেক্ট করতে ভূমিকা পালন করে।
    তাই তো গ্রামের মানুষেরা ত্বকের যত্নে সরিষার তেল কে বেছে নিতো। কারণ তারা যুগ যুগ ধরে জেনে আসছে ত্বক ভালো রাখার জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করতে হবে। আসুন জেনে নেই ত্বকে সরিষার তেলের ব্যবহারের ফলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যাবে। যেই উপকারিতা গুলোর মাধ্যমে আপনি উপকৃত হতে পারবেন।

    ১। ত্বকে দাক সার্কেল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করুন। তাইতো সরিষার তেলের সাথে লেবুর রস, বেসন ও দই মিশিয়ে তারপরে আপনার পুরো ত্বকে মালিশ করুন। অতঃপর ৮ থেকে ১২ মিনিট রেখে দিন। তারপরে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে একদিন পর পর ব্যবহার করুন।

    ২। রোদের মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক রশিগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। শুধু তাই নয় সূর্যের আলোতে অতিরিক্ত তাপ থেকেও রক্ষা পাবেন।

    ৩। আপনি কি জানেন ত্বকের শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষার জন্য যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে সরিষার তেল। আধা চামচ সরিষার তেল হাতে নিয়ে মুখে মালিশ করুন। আর কিছুক্ষণ পরে পরিষ্কার পানি দ্বারা মুখ ধুয়ে ফেলুন।

    ৪। যাদের শীতের সময় ঠোট ফাটার সমস্যা রয়েছে। তারা ঠোঁট ফাটার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দু এক ফোঁটা সরিষার তেল ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন।

    ৫। আপনি যদি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চান। তাহলে নারিকেল ও সরিষার তেল একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। এই দুটো তেল একসাথে মিশিয়ে ত্বকে মালিশ করতে থাকেন। সাত থেকে আট মিনিট মালিশ করার পরে ত্বক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
    ৬। আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের ত্বকে অ্যালার্জি ও চুলকানি জনিত সমস্যা রয়েছে। তারা সরিষার তেল ব্যবহার করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলুন।

    ৭। ত্বকের বয়সের ছাপ, ফুসকুড়ি, ব্রুণের দাগ ও ব্রুণ দূর করার ক্ষেত্রেও সরিষার তেল সহায়তা করে। হাতে আধা চামচ সরিষার তেল মাখিয়ে নিন। তারপরে ওই হাত ত্বকে মালিশ করুন। দেখুন কিছুদিন পরে এর ফলাফল কতটা উপকারী হয়।

    বাচ্চাকে সরিষার তেল দিলে কি হয়

    গ্রাম বাংলার শত বছরের ইতিহাস হচ্ছে সরিষার তেল। শত শত বছর ধরে শিশুদের শরীরে সরিষার তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। শিশুদের জন্য সরিষার তেলের মধ্যে যে উপকারিতা রয়েছে। তা অন্যান্য তেলের মধ্যে নেই। এমনকি অনেক প্রকারের লোশন রয়েছে যেগুলো শিশুদের শরীরের ত্বকের জন্য উপযোগী নয়।

    আজ থেকে কিছু বছর আগেও শীতের সময় বাচ্চা ও শিশুদেরকে গোসল করানোর পর শরীরের সরিষার তেল দিয়ে রোদে বসিয়ে রাখত। আমাদের দেশে শিশুদের শরীরের সরিষার তেলের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। কারণ শিশুদের জন্য সরিষার তেলের মধ্যে অনেক উপকার রয়েছে।
    শীতের সময় শিশুকে সরিষার তেল দিলে সর্দি ও কাশি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এমনকি শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই হয় যা থেকে শিশুকে রক্ষা করে। এর জন্য রসুন ও সরিষার একসাথে মিশিয়ে গরম করে নিন। গরম হয়ে যাওয়ার পরে তেলটিকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য সময় দিন।

    তারপরে যখন ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন শিশুর শরীরে আস্তে আস্তে মালিশ করে দিন। গরম করার কারণ হচ্ছে তেলের ঘনত্ব টা কমে যায়। তাই আপনার শিশু বা বাচ্চার শরীরে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে অনেক উপকার।

    যা আপনার শিশুকে সুস্থ ও সবল রাখতে সহায়তা করে। অনেকেই মনে করে শিশুকে সরিষার তেল দিলে চামড়া কালো হয়ে যাবে। এটি একমাত্র নিছক ধারণা। এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। বরং আপনার শিশুর ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল থাকবে।

    চুলে সরিষার তেলের উপকারিতা

    আমরা চুলের উপকারিতা বিভিন্ন ধরনের হেয়ার অয়েল ব্যবহার করি। অনেকেই চুলের যত্নে নারকেল তেল ব্যবহার করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। আসলেই সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে চুলের জন্য অনেক উপকার।

    কারণ সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক ও সেলেনিয়াম এর মত দারুণ সকল উপকারী উপাদান। যা চুলের যত্নে যে সকল উপাদানের প্রয়োজন তার প্রায় সকল কিছুই সরিষার তেলের মধ্যে পাওয়া যায়।

    তাইতো নারকেল তেলের পাশাপাশি মাঝেমাঝে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আর দেরি না করে চলেন জেনে আসি চুলে সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে।

    ১। চুল দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।

    ২। যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সরিষার তেল চুল পড়া বন্ধ করে চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে তোলে। সাধারণত চুল পড়ার কারণ হচ্ছে ফলিকল দুর্বল হয়ে যাওয়া যা রোধ করতে সরিষার তেল সহায়তা করে।

    ৩। আমরা সকলেই চাই চুলকে আগের তুলনায় একটু বেশি বড় করতে। সত্যি যদি চুলকে আগে তুলনায় বেশি বড় করতে চান তাহলে সরিষার তেলে এর সমাধান খুঁজে পাবেন। কারণ সরিষার তেলে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, জিংক ও সেলিনিয়াম যা চুলের গ্রোদ্ধ ধরে রাখে ও বাড়াতে সাহায্য করে।

    ৪। চুলের তালুতে সঠিক ভাবে রক্ত সঞ্চালন না হওয়ার কারণে চুলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আর এই সমস্যাটি শুধু আপনার একার নয় অনেকেরই রয়েছে। তাইতো রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে মাথার তালুতে সরিষার তেল ব্যবহার করুন।

    ৫। অকালে চুল পেকে যাওয়া রোধ করার জন্য সরিষার তেলের মধ্যে উপকার পাবেন।

    ৬। চুলের গোড়া পাতলা, চুলকানি ও খুশকি রোধ করতে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সরিষার তেলের মধ্যে অ্যান্টি ফাঙ্গাল নামে উপাদান থাকে যা এর সমাধানে ভূমিকা পালন করে।

    ৭। চুলকে উকুনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত চিরুনি দিয়ে মাথা হাছড়াবেন। তাহলে উকুন নামক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।

    ৮। সরিষার তেল ও অ্যালোভেরা ভালো করে মিশিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট রেখে দিন তারপরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপরে সরিষার তেলের সাথে ধনে গুড়া মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। একই সময় পর শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। তারপরে সরিষার তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। মাথায় দেওয়ার প্রায় ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

    চুলে সরিষার তেলের অপকারিতা

    সরিষার তেলের ব্যবহারে শুধু উপকারিতাই পাওয়া যায় না। অনেক সময় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতার লক্ষণও দেখা যায়। এটি দেখা যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার না করা। অবশ্যই খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করলে এই সকল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা থেকে বেঁচে থাকা যায়।

    আবার আপনি যদি সরিষার তেল ব্যবহার করে মাথায় বেশি দিন রেখে দেন এর ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়া ক্ষতিকর হতে পারে। তাই বেশিক্ষণ না রেখে এক থেকে দুই ঘন্টা সরিষার তেল মাথায় দিয়ে রাখার পরে মাথা ধুয়ে ফেলুন। আর সবসময় চেষ্টা করবেন খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করার।

    খুঁজে বের করুন যে সকল জায়গায় খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যায়। সরিষার তেল চুলে ব্যবহারের ফলে চোখ হালকা ঝাঁঝালো অনুভব করবে। যদি এইরকম অনুভূতি হয়ে থাকে তাহলে সরিষার তেল চুলে ব্যবহার আগের তুলনায় কমিয়ে নিয়ে আসুন। আর অল্প অল্প করে সরিষার তেল ব্যবহার করবেন।

    রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা

    রান্নায় সরিষার তেলের ব্যবহারের ইতিহাস হলো শত বছরের। একটা সময় গ্রাম বাংলার মানুষ খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে রান্না করতো। সেই রান্না কৃত খাবারগুলো খেতে কতই না সুস্বাদু ছিল। সরিষার তেলের মাছ ভাজা খেতে কে পছন্দ করত না। তাইতো আমাদের দেশের একটা সময় রান্নাবান্নার কাজে শুধুমাত্র ব্যবহার করা হতো সরিষার তেল।

    কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে মানুষ সরিষার তেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা হয়তো মনে করে সরিষার তেল দিয়ে রান্নার মধ্যে কোনো উপকারিতা নেই। আসলেই কি তাই। কথাটি সম্পূর্ণ ভুল কারণ সরিষার তেল বহু গুনে বহুরূপী। তাহলে রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিন।

    হার্ট ভালো রাখেঃ হার্ট ভালো রাখার জন্য সরিষার তেলের মধ্যে উপকারিতা রয়েছে। কারণ সরিষার তেলের মধ্যে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও পলিঅনস্যাচুরেটেড হার্ট কে সুস্থ রাখার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

    ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সরিষার তেল রান্না করে খেতে পারেন। সরিষার তেল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রটেক্ট গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। তাইতো সরিষার তেল নিয়মিত খাওয়াই রয়েছে উপকার।

    মাথার জন্য কার্যকরী ভূমিকাঃ আমরা অনেকেই কখনো না কখনো মাথা ব্যথার মত সমস্যায় ভুগেছি। অনেকের মাইগ্রেনের সমস্যার কারণেও মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। তাই সরিষার তেল খাওয়ার মাধ্যমে মাথাব্যথা কমানো সহ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও দারুন ভূমিকা পালন করে।

    হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ বর্তমান সময়ে হজম শক্তির সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে ঘরোয়া হিসেবে সরিষার তেল খেতে পারেন। সরিষার তেল হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে দারুণ কাজ করে। পাশাপাশি আপনি আর একটি উপকার পাবেন সেটা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণে হজমে গোলমাল ও পেট ব্যথার মত সমস্যা হয়ে থাকে।

    ব্যথায় উপশমঃ নিয়মিত সরিষার তেল রান্না করে খাওয়ার মাধ্যমে শারীরিক যে সকল ব্যথা রয়েছে তা থেকে উপশম পাবেন। তাই নিয়মিত রান্না করে সরিষার তেল খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ব্যথাগুলো থেকে উপশম পান। শুধু কি তাই দাঁতের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকেও মুক্তি দিতে পারে সরিষার তেল।

    কোলেস্টেরল বৃদ্ধিঃ শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সরিষার তেল দারুন কাজ করে। তাই তো ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত সরিষার তেল খেতে থাকুন। সরিষার তেল কোলেস্টেরলের দারুণ এক উৎস।

    সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক

    আপনারা হয়তো মনে করছেন এত গুনাগুন সম্পূর্ণ তেলে আবার ক্ষতি কর দিক রয়েছে। হ্যাঁ সরিষার তেলের মধ্যেও কিছু ক্ষতিকর গুনাগুন এর উপস্থিত রয়েছে। এই তেলটি অতিরিক্ত ব্যবহার ফলে ক্ষতিকর দিকগুলো দেখা যায়। আপনি যদি অতিরিক্ত সরিষার তেল খেতে থাকেন।

    তাহলে বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক ঘিরে ধরবে। তাই পরিমাণ মতো খাওয়ায় শরীরের পক্ষে শ্রেয় হবে। আর এর উপকার ও গুনাগুন অক্ষুন্ন থাকবে। অতিরিক্ত খাওয়া বাদেও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আসুন জেনে নেই সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক গুলো।
    • সরিষার তেল খাওয়ার ফলে হার্টের সমস্যা হতে পারে। এই জন্য অতিরিক্ত সরিষার তেল না খেয়ে পরিমাণ মতো সরিষার তেল খাবেন। তাহলে আশা করা যায় সরিষার তেল হার্টের পক্ষে উপকার হবে।
    • অতিরিক্ত সরিষার তেল খাওয়ার ফলে পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া সহ আরো কিছু সমস্যা।
    • সরিষার তেল খাবারের প্রতিফলন হিসেবে ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। এর জন্য বেশি পরিমাণে সরিষার তেল না খেয়ে পরিমাণ মতো খেতে হবে। চাহিদার তুলনায় বেশি খেলে ফুসফুস ড্যামেজ হয়ে যায়। যার ফলে ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে।
    • ত্বক ও চুলে সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে চোখ জ্বলনের সৃষ্টি হতে পারে।

    সরিষার তেল খেলে কি ওজন বাড়ে

    সরিষার তেল আসলেই কি ওজন কমাতে সাহায্য করে। নাকি এটা শুধুমাত্র নিছক কথা। আপনি যেখানেই শুনে থাকেন না কেন যে সরিষার তেল ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাহলে আপনি সঠিক শুনেছেন। সরিষার তেলে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

    তবুও শুনে অবাক হবেন যে সরিষার তেল খাওয়ার মাধ্যমে কখনোই ওজন বৃদ্ধি পায় না। কারণ এই তেলের মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি এসিড যা শরীরের স্বাস্থ্যকর চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই সরিষার তেল খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় না।

    সরিষার তেলে কি এলার্জি আছে

    সরিষার তেলের মধ্যে অনেক উপকারিতা রয়েছে তা তো আমরা শুনেছি। কিন্তু সরিষার তেলের মধ্যে এলার্জি রয়েছে কি। হ্যাঁ সরিষার তেলের মধ্যে এলার্জির উপস্থিতি পাওয়া যায়। যা আপনার শরীরে এলার্জি সংক্রমণের সৃষ্টি হতে পারে।

    যদি সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে আপনার শরীরে এলার্জির এর সংক্রমণ ঘটে থাকে। তাহলে আপনি চাইলে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি সরিষার তেল ব্যবহার করলে এলার্জির কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তাহলে নির্দ্বিধায় সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। এর এলার্জির কারণে শরীরের চুলকানি ও বমি বমি ভাবের সৃষ্টি হতে পারে।

    উপসংহার সরিষার তেল মালিশের উপকারিতা

    পরিশেষে বলা যায় বাংলার ইতিহাসের সাথে সরিষার তেলের একটি সম্পর্ক রয়েছে। যে সম্পর্কটির বয়স প্রায়শত বছরেরও বেশি হয়ে গেছে। চুল থেকে শুরু করে শরীরের অনেক স্থানে সরিষার তেল মালিশের জন্য ব্যবহার করতে সেই সময়। তাই আমরাও সরিষার তেল মালিশের জন্য ব্যবহার করতে পারি। সরিষার তেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রান্না করে খেতে পারি। আমরা আমাদের ইতিহাসকে ধরে রাখার পাশাপাশি উপকারিতা গুলোও লুফে নিতে পারি।

    শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক আপনারা ইতিমধ্যে সরিষার তেল মালিশের উপকারিতা ও সরিষার তেলের সাথে সংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো রয়েছে তা জেনে নিয়েছেন। এর উপকারিতা সেগুলো জেনে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার আশেপাশে থাকা কাছের মানুষদেরকেও সরিষার তেল সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। যেন তারাও এর উপকারিতা গুলো পেতে পারে। পুরো তথ্যটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url