ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে নিন
আপনি কি ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম গুলো জানার জন্য আগ্রহী। সত্যি যদি আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়মাবলী ও ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। কারণ এই গাছের বিভিন্ন অংশ খাওয়ার মধ্যে আছে বিশেষ কিছু উপকারিতা। যা শুধুমাত্র এই গাছের অংশগুলো খাওয়ার মধ্যেমে পাওয়া যায়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ওলট কম্বল গাছের ডাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংশ খেয়ে থাকে। কিন্তু তারা এর উপকারিতা ও গুনাগুন জানেন না। এই গাছটি কোন নিয়মগুলো মেনে খাওয়ার মাধ্যমে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায় সেটিও হয়তো জানেন না।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
ভূমিকা
আমাদের আশেপাশে অনেক ভেষজ গাছ জন্মাতে দেখা যায়। কিন্তু আমরা সেই গাছগুলোকে তেমন গুরুত্বের সাথে দেখি না। এর বড় একটি কারণ হচ্ছে সেই গাছগুলোর উপকারিতা সম্পর্কে কেউ তেমন ভাবে অবগত নয়। আর সেই জন্যই ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা জেনে খেতে পারেন।
এই গাছটির উচ্চতা ৭ থেকে ৯ ফুটের মতো। এর পাতাগুলো বেশ বড় বড় হয়। ফুলগুলো দেখতে খয়রি কালার ও অনেক সুন্দর। এই গাছটি ঝোপঝাড় ও নদী নালার আশেপাশে জন্মাতে দেখা যায়। ওলট কম্বল গাছকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ সহ আরো কিছু দেশগুলোতে।
সত্যি আপনি যদি ওলট কম্বল গাছের বিভিন্ন অংশ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন জানতেন। তাহলে এখনই খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিতেন। কারণ এর মাঝে রয়েছে এমনই কিছু বিশেষ উপকারিতা যা অন্যান্য গাছগুলোতে তেমন ভাবে পাওয়া যায় না।
ওলট কম্বল খেলে কি হয়
আপনি হয়তো ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে অবাক হবেন। এই গাছের মধ্যে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ব্যক্তিগত কিছু উপকারিতা লুকিয়ে রয়েছে। তাই তো প্রত্যেকটি ব্যক্তিদের এই গাছটিকে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
আরো পড়ূনঃ ত্রিফলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কারণ এর মধ্যে আছে এমন কিছু উপাদান যা ঋতুস্রাব থেকে শুরু করে যৌন শক্তি মত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। তাইতো আপনারা যদি এই গাছের উপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন না জেনে থাকেন। তাহলে ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিতে পারেন।
ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা
পিরিয়ডের সময়ের জন্য উপকারীঃ যেই সকল নারীদের পিরিয়ড চলছে তারা এই গাছের উপকারিতা নিতে পারেন। অনিয়মিত পিরিয়ড ও পিরিয়ড কালীন সময়ে পিরিয়ড নিয়মিত না হওয়া এই দুটো সমস্যায় সমাধান দিয়ে থাকে। তাই ঋতুস্রাব সময়টা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ওলট কম্বল খাওয়ার মধ্যে রয়েছে উপকারিতা।
শারীরিক দুর্বলতাঃ শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কত কিছুই না সেবন করি। কিন্তু দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই সেটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে না। কিন্তু আপনি যদি ওলট কম্বল ডাল ভেজানো পানি নিয়মিত খেতে পারেন। তাহলে শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই আপনার বাড়ির পাশে যদি ওলট কম্বলের গাছ থাকে তাহলে সেখান থেকে ডাল সংগ্রহ করুন। আর এর ভিতরে থাকা উপকারিতা গুলো লুফে নিন।
যৌন শক্তি বৃদ্ধিঃ আপনি যদি আগের তুলনায় আরো বেশি জনশক্তি বৃদ্ধি করতে চান। তাহলে ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা নিতে পারেন। গাছের ডাল ভিজিয়ে নিয়মিত শরবত আকারে খেলে আস্তে আস্তে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এটি আপনার শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া বীর্যের ঘাটতি পূরণ করে।
আরো পড়ূনঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
পেট ঠান্ডা রাখেঃ এই গরমের সময় ও ফাটানো রোদের মধ্যে আমরা কতই না ক্লান্ত বোধ করি। রোদের মধ্যে যারা শারীরিক পরিশ্রম করে তারা রীতিমতো দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই আপনি যদি শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি যোগানোর পাশাপাশি পেট ঠান্ডা রাখতে চান। তাহলে ওলট কম্বল ডালের ভেজানো শরবত খেতে পারেন। তাহলে আপনার সকল ধরনের ক্লান্তি ও অবসাদ পালিয়ে যাবে।
গনোরিয়া রোগের প্রতিরোধঃ কেউ যদি গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন অথবা আগে থেকেই সতর্ক হওয়ার জন্য ওলট কম্বলের ডাল ও পাতা খেতে পারেন। কারণ গনোরিয়া রোগের জন্য ওলট কম্বল গাছকে বিশেষ উপকারী হিসেবে ভাবা হয়। যেমন পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও মূত্রথলির মাধ্যমে পুঁজ বের হওয়ার মতো সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে।
ব্যথার নিরাময়ঃ মানুষের বয়সের সাথে সাথে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। আর এরই ফল শ্রুতিতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ গুলোতে ব্যথার সৃষ্টি হয়। মাজায় ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, শরীরের মাংসে ব্যথা ও বাতের ব্যথা সহ আরো অনেক ব্যথা রয়েছে যেগুলো নিরাময় করে থাকে। তাইতো ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হিসেবে ওলট কম্বল গাছের সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারেন।
নারীদের বন্ধাত্বঃ আপনি কি জানেন বন্ধ্যাত্ব দূর করার জন্য ওলট কম্বল খাওয়া কতটা জরুরী। এর মধ্যে রয়েছে ওই সকল উপাদান যা বন্ধাত্বের জন্য কার্যকরী ও উপকারী ভূমিকা পালন করে। তাইতো নারীরা নিয়মিত ওলট কম্বল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর নিজেকে নারীত্ব নানান ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহযোগিতা করুন।
দ্রুত বীর্যপাতঃ যাদের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা রয়েছে। তারা ওলট কম্বলের বীজ খেতে পারেন। এতে করে আপনার দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হওয়ার সমস্যার সমাধান পাবেন। এর জন্য রাতে ঘুমানোর আগে ১৫ থেকে ১৮ টি উলট কম্বলের বীজ খেতে পারেন। এভাবে করে নিয়মিত বীজগুলো খেতে থাকুন।
আরো পড়ূনঃ মধুময় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
অতিরিক্ত স্বপ্নদোষঃ অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের ফলে যাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারা নিয়মিত কম্বলের বীজ ১০ থেকে ১৫ টি খেতে পারেন। তাহলে দেখবেন কিছু দিনের মধ্যেই আপনার শরীর চাঙ্গা হয়ে গেছে। আগের মতো আর নিজেকে দুর্বল মনে হয় না।
ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম
আমরা অনেকেই শুনেছি ওলট কম্বল এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টি ও গুনাগুন। কিন্তু এটি কিভাবে খেলে এর গুনাগুন ও উপকার গুলো পাওয়া যাবে তা কিন্তু অনেকেই শুনেননি। আমরা তো এর উপকারিতা জানি কিন্তু আপনি যদি এর খাওয়ার নিয়ম গুলো না জানেন তাহলে তেমন কোনো উপকারিতা পাবেন না।
ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম জানার এটাই সুবিধা যে খাবারটির ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকা যায়। পাশাপাশি এর যে কার্যকারিতা রয়েছে সেগুলো ভোগ করা যায়। তাহলে ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম গুলো কি কি তা জেনে নিন।
আরো পড়ূনঃ গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা
- রাতে ঘুমানোর আগে তিন থেকে চারটি ওলট কম্বলের ডাল ছোট ছোট করে কেটে ৩০০ গ্রাম পরিষ্কার পানির মধ্যে ছেড়ে দিন। খেয়াল রাখতে হবে যেন কমপক্ষে ৮ ঘন্টা পানির মধ্যে ভেজানো থাকে।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারেন। আবার শারীরিক চর্চা শেষেও ওলট কম্বলে ডালের ভেজানো পানি খেয়ে নিতে পারেন।
- ওলট কম্বল ডালের ভেজানো পানির মধ্যে আধা চামচ চিনি অথবা যত কম পরিমাণে চিনি হবে ততই ভালো। চিনি ছাড়া খেতে পারলে আরো বেশি স্বাস্থ্যের জন্য উপকার।
- ওলট কম্বল ডালের ভেজানো পানির ও পাকা বেলের সাথে মিশিয়ে শরবত করে খেতে পারেন। যখন অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হবে তখন এক গ্লাস শরবত খাওয়ার মাধ্যমে অবসাদ দূর করতে পারেন।
- ওলট কম্বল গাছের মূল ও পাতা খেতে পারেন। এই দুটি অংশের মধ্যেও অনেক উপকার লুকিয়ে রয়েছে।
- ওলট কম্বলের বীজ খেতে পারেন ভিজে অথবা খালি মুখে দিনে ১৫ থেকে ১৮ টি বীজ খেতে পারেন। সকাল অথবা রাতের যেকোনো সময়।
আরো পড়ূনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কিন্তু আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত কোনো জিনিস ভালো না। খাওয়ার আগে অবশ্যই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে যেন অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়া হয়।
ওলট কম্বল গাছের অপকারিতা
ওলট কম্বলের গাছের তেমন অপকারিতা পাওয়া যায়নি। তবে এই গাছের উপরে যে উলগুলো থাকে সেগুলো যদি শরীরের সাথে স্পর্শ করে। তাহলে শরীর জ্বালাপোড়া করতে পারে। ওলট কম্বল গাছের মূল, পাতা, ডাল ও বীজ কোনোটি বেশি খাওয়া যাবে না। যার ফলাফল খুবই খারাপ হতে পারে। এমনকি বেশি খাওয়ার ফলে উপকারিতাগুলো নাও পেতে পারেন।
অনেকেই বলে ওলট কম্বল গাছের ডাল অথবা অন্যান্য অংশগুলো খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা হয়। যদি আপনি বুঝতে পারেন যে ওলট কম্বল গাছের কোন অংশ খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা হচ্ছে। তাহলে তৎক্ষণাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিন। গর্ভবতী নারীরা ওলট কম্বলের যেকোনো অংশ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ওলট কম্বল গাছ কোথায় পাওয়া যায়
আমরা অনেকেই ওলট কম্বল গাছ খোঁজাখুঁজি করে থাকি। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কাঙ্খিত গাছটি আর পাওয়া যায় না। তাহলে এই গাছের খোঁজ কোথায় পাওয়া যাবে। এর জন্য আপনি বিভিন্ন ধরনের নার্সারি গুলোতে খোঁজ করতে পারেন। আবার আপনার বাসার পাশে যদি কোনো জঙ্গল থাকে তাহলে সেখানে খোঁজ করুন।
কারণ এই গাছ জঙ্গলের ভেতরে বেশি জন্মাতে দেখা যায়। তবে ওলট কম্বল গাছের মতো আরও একটি গাছ রয়েছে। যেই গাছটি দেখতে অনেকটাই ওলট কম্বল গাছের মতো। তবে এত কিছুর মধ্যেও আপনি নার্সারি গুলোতে যদি খোঁজ করতে থাকেন। তাহলে সেখান থেকেই ওলট কম্বল গাছের চারা গুলো পেয়ে যাবেন।
ওলট কম্বল গাছের গুরুত্বপূর্ণ কিছু FAQ
১। ওলট কম্বল এর বৈজ্ঞানিক নাম কি?
ওলট কম্বল এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Abroma augustum.
২। ওলট কম্বল এর ইংরেজি নাম কি?
ওলট কম্বল এর ইংরেজি নাম হচ্ছে Devils cotton.
৩। ওলট কম্বল গাছের বিভিন্ন অংশের নাম কি কি?
ওলট কম্বল গাছের বিভিন্ন অংশের নাম হচ্ছে মূল, ডাল, পাতা, ছাল, ফুল ও বীজ।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় আমরা অনেকেই আছি কখনো না কখনো ওলট কম্বল ডালের শরবত খেয়েছি। কিন্তু তখন এই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে তেমন একটা অবগত ছিলাম না। কিন্তু এই তথ্যটির মাধ্যমে আপনারা ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা গুলো জেনে নিয়েছেন। আর যদি পুরো তথ্যটি না পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই পুরো তথ্য পড়ুন। আশা করি পুরো তথ্যটি পড়ার মাধ্যমে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। কারণ এই গাছের মধ্যে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। যা হয়তো আপনারা কখনো শুনেননি।
শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আপনারা ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম জেনে নিয়েছেন। এর বিশেষ কিছু উপকারিতা সম্পর্কেও আপনারা এই তথ্যটির মাধ্যমে অবগত হয়েছেন। তবে এই তথ্যগুলো পড়ার মাধ্যমে সত্যি যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে এই গাছটির বিষয়ে কথা বলুন। যাতে করে তারাও ওলট কম্বল গাছের বিষয়ে জানতে পারে। পুরো তথ্যটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url