চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম ও সঠিক সময়

আপনি যদি জানতে চান চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম এবং তার যথাযথ সঠিক সময় সম্পর্কে। আর যদি নিজের চুলের উপরে যত্নশীল হতে চান তাহলে বলব পুরো আর্টিকেল সম্পূর্ণ পরা উচিত। কারণ এখানে রয়েছে চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম এবং চুলের তেল দেওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা। যা আপনার চুলের উপর যত্নশীল হতে সাহায্য করবে।
চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম ও সঠিক সময়
আমরা অনেকেই চুলে তেল দিতে সচ্ছন্দ বোধ করি না। কিন্তু চুলের প্রধান খাদ্য হচ্ছে তেল। আর এই জন্য যথা সময়ে এবং সঠিক নিয়মে চুলে তেল দেওয়া উচিত। যেন চুলের স্বাস্থ্যের উপর কোন ক্ষতি না হয়।
পোস্ট সূচিপএঃ 

চুলে তেল দেওয়ার নিয়ম

পূর্বের মানুষের তুলনায় বর্তমান সময়ের মানুষের চুল পড়ার সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হতে পারে জেনেটিক সমস্যা এবং অতিরিক্ত চাপ। এই সমস্যা শুধুমাত্র নারীদের নয় পুরুষদেরও রয়েছে। তাই এটি উভয়গ্রুপ মানুষের সমস্যার কারণ বলা যেতে পারে। আবার অনেকের চুলে সঠিক ভাবে তেলের ব্যবহার না জানার কারণে চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পায় না বরং এর বিপরীত দেখা যায়।

তাই চুলের পুষ্টি যথাযথ রাখার জন্য এবং সঠিক ফলাফল পেতে হলে সঠিক নিয়মে চুলে তেল দিতে হবে। আমরা অনেকেই রয়েছি যারা চুলের যত্নে পার্লারের সম্মুখীন হয়। যার কারণে দেখা যায় অনেক সময় চুলের ফলিক এর সমস্যা দেখা দেয়। চুলের গোড়া মজবুত থাকে না। এইজন্য ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা শ্রেয় হতে পারে। তাই আসুন জেনে নেই কিভাবে এবং কখন কোন নিয়মে চুলে তেল দিতে হবে।
অতিরিক্ত তেলের ব্যবহারঃ আমরা অনেক সময় বলে থাকি অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নাই। ঠিক এই কথাটা তেলের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তেলের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে আপনার মাথার চুল এবং মাথার ত্বকের উপর নির্ভর করে। অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের ফলে চুল পড়া এবং খুশকি এর মত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

আপনার যদি খুশখো চুল হয় সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে দুইবার তেল দিতে পারেন তাও পরিমাণ মতো ভুলেও একবারে চপচপ করে দিবেন না। আবার আপনার মাথার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে সপ্তাহে একবার দাওয়াই যথেষ্ট হবে। অবশ্যই চুলে তেল দেওয়ার পরবর্তী কিছু সময়ের জন্য মাথায় রেখে দিবেন। নিম্নোক্ত পক্ষে এক থেকে দেড় ঘন্টার মত রাখতে পারেন। এরপরে শ্যাম্পু দ্বারা চুলটি ধৌত করুন।

কোন উপায় ব্যবহার করে চুলে তেল দেবেন? আমরা অনেকে চুলে তেল দেওয়ার সময় হাতের আঙ্গুল ব্যবহার করে থাকি। এটি মোটেও সঠিক পদ্ধতি নয়। সঠিক পদ্ধতিটি হচ্ছে আপনার হাতের পাঁচ আঙ্গুল দ্বারা বৃত্তাকার পদ্ধতিতে ম্যাসাজ করুন। আপনি যদি হাতের তালু ব্যবহার করার মাধ্যমে মাথায় তেলের মাসাজ করেন তাহলে চুল ভাঙ্গার সম্ভাবনা থেকে যায়।

তাই সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাতের পাঁচ আঙ্গুল দ্বারা বৃত্তাকার পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে চুলে তেল দেওয়া। আর তেল দেওয়ার সময় অবশ্যই মাথার পেছনের শেষ ভাগের চুল এবং গোড়া আর মাথার প্রত্যেকটি অংশে সমপরিমাণ তেল দেওয়া প্রয়োজন। এভাবে করে যদি চুল দেওয়া যায় তাহলে আশা করা যায় চুলের গোড়া মজবুত এবং চুল সুন্দর থাকবে।

চুলে নারকেল তেল দেওয়ার নিয়ম

চুলের যত্নের আরেক নাম হচ্ছে নারকেল তেল। আচ্ছা বলুন তো চুলের ব্যবহারের জন্য এত তেল থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ নারীরা নারকেল তেল কেন বাছাই করে। কারণ চুলের জন্য নারকেল তেলের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন ও পুষ্টি যা আপনার চুলের গোড়াকে করে মজবুত এবং সুস্থ্য। কিন্তু ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে চুলে নারকেল তেল দেওয়া সত্ত্বেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই চুলকে ঘন এবং লম্বা করার জন্য নারকেল তেল দেওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নিন।

আপনার চুল রুক্ষ বা মোটা হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি তৈলাক্ত ও পাতলা হয়ে থাকে তাহলে সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। শীতের সময় তেলের ব্যবহার আরো কমিয়ে ফেলুন। কারণ এক্ষেত্রে চুলের গোড়া ভেঙ্গে যেতে পারে।

চুলে তেল ব্যবহারের আগে হালকা করে নারকেল তেল গরম করে তা উমা উমা গরম থাকা অবস্থায় হালকা করে পরিমাণে নিয়ে পাঁচ আঙ্গুল দ্বারা চুলে মাসাজ করুন। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সব জায়গায় সমপরিমান তেল পৌঁছানোর ব্যাপারে। আর তেল দেওয়ার পরবর্তী সময় কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট মাথায় রাখুন। এর পরে শ্যাম্পু দ্বারা ভালোভাবে ধৌত করে নিন।
নারকেল তেলের সাথে আরো কিছু উপাদান ব্যবহার বা যুক্ত করার মাধ্যমে চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি এবং মজবুত করা সম্ভব। এতে করে তেলের পুষ্টি আরো বৃদ্ধি পায়। আপনি নারকেল তেলের মধ্যে পেঁয়াজের রস, কালোজিরার গুড়া, ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল অথবা গোলাপ জল যেকোনো একটি পরিমাণ মতো ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্যই পরিষ্কার মাথায় ব্যবহার করা উপযুক্ত।

চুলে তেল দেওয়ার সঠিক সময়

আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত চুলের তেল দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। কিন্তু চুলের তেল দেওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে যদি না জানা থাকে তাহলে অবশ্যই জানা প্রয়োজন। কারণ সঠিক সময় ও নিয়ম না জানার কারণে চুলের গ্রোথ নষ্ট হয়ে পড়ে এবং চুলের গোড়া ভেঙ্গে যায়। তাই সঠিক সময় সঠিক জিনিস করাই উপযুক্ত। তাই আসুন জেনে নেই চুলে তেল দেওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে।

আপনি যদি চুলের সাইন এবং চুলকে সুন্দর করে তুলতে চান তাহলে গোসল করার ঠিক এক থেকে দুই ঘন্টা আগে তেল দ্বারা চুল মালিশ করুন। এরপরে গোসল করে নিন এবং চুল শ্যাম্পু দ্বারা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল অনেক সুন্দর এবং মশ্চারাইজার হয়েছে।

আমরা অনেকে বিভিন্ন সময় মাথায় তেল দিয়ে থাকি। কিন্তু কোন সময় চুলে তেল দেওয়া উপযুক্ত হতে পারে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে বসবাস করি। যেমন অনেকে রাতে মাথায় তেল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আবার অনেকে গোসল করার দুই থেকে তিন ঘন্টা আগে চলে তেল দেয়। সবগুলো পদ্ধতি সঠিক কিন্তু এটা নির্ধারিত হয় চুল এবং মাথার ত্বকের উপর নির্ভর করে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

রাতে চুলে তেল দিলে কি হয়

চুলে তেল দেওয়া অবশ্যই উপকারী যদি হয় সেটা সঠিক নিয়ম এবং সময় ভেদে। আমরা অনেকে রাতে চুলে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি এবং পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলি। এতে করে কি কোন ক্ষতি হতে পারে নাকি ফলাফল ভালো হবে। এই নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলে দীর্ঘ সময় তেল দিয়ে রাখলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এবং এর ফলে চুল ঝরতে শুরু করে।

কিন্তু আবার অনেকের মত দীর্ঘ সময় চুলে তেল দিয়ে রাখলে যেমন ধরুন রাতে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সকালে ঘুম থেকে উঠে চুলকে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললে চুলে যথাযথ পুষ্টি এবং ঝলমলে থাকে। এখন কথা হচ্ছে আপনার মাথার ত্বক এবং চুল কেমন। যদি মনে হয় যে দীর্ঘ সময় তেল দিয়ে রাখার ফলে চুল ওঠার মত ঝুঁকি রয়েছে তাহলে এটি বর্জন করুন। আর তা না হলে দীর্ঘ সময় তেল দিয়ে রাখতে পারেন।

চুলে গরম তেল দিলে কি হয়

চুলে গরম তেল দেওয়া চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গরম তেল চুলে মালিশ করার ফলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। আরো চুলের গোড়া মজবুত এবং চুলের গ্রোথ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। আরো সুবিধা হচ্ছে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।

এর জন্য খুবই উপযুক্ত হবে গরম নারিকেল তেল। কারণ নারকেল তেলের মধ্যে গুণাগুণ এর অভাব নেই। তারপরে আবার যদি গরম করে মাথায় মালিশ করা হয় তাহলে উপকার দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই আপনি চুলে গরম তেল ব্যবহার করতে পারেন।

ভেজা চুলে তেল দিলে কি হয়

ভেজা চুলে তেল লাগালে উপকারের থেকে অপকারিতায় বেশি রয়েছে। আপনি যদি নিয়মিত ভেজা চুলে তেল দিয়ে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে এটিকে বর্জন করুন। কারণ ভেজা চুলে তেল দেওয়ার ফলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এর ফলে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়।

শুধু তাই নয় পাশাপাশি আপনার চুলে খুশকি বাসা বাঁধতে পারে এবং চুল ময়লাকে আকর্ষিত করতে শুরু করে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে যদি ভেজা চুলে তেল দিয়ে থাকেন তাহলে চুলের ক্ষতি বেশি রয়েছে। এই জন্য ভেজা চুলে তেল না দেওয়াই উপকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চুল সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ MCQ

১। চুলে শ্যাম্পু করার পর তেল দিলে কি হয়?
উওরঃ চুলে শ্যাম্পু করার পর তেল দেওয়া এবং তেল দেওয়ার পর শ্যাম্পু করলে চুলের গ্রোথ ভালো থাকে পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলাতেও বৃদ্ধি পায়। তাই আপনার চুলকে সবসময় স্বাচ্ছন্দ রাখতে সাহায্য করে।

২। চুলে তেল দিয়ে কতদিন রাখা যায়?
উওরঃ চুলে তেল দিয়ে বেশিক্ষণ রাখা উচিত নয়। আপনার মাথার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে এক থেকে দুই ঘন্টার ভেতরে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

৩। সপ্তাহে কয়দিন তেল দেওয়া উচিত?
উওরঃ প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন মাথায় তেল মালিশ করতে পারেন। এতে করে চুলের মশ্চারাইজ ভালো থাকে এবং অন্যান্য পুষ্টি গুলো যথাযথ পায়।

৪। সপ্তাহে কয়দিন শ্যাম্পু করা উচিত?
উওরঃ চুলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন শ্যাম্পু করা উচিত। এত করে চুলের জট থাকে না এবং চুলের উজ্জ্বলতা ভালো থাকে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, আমাদের শরীরের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ হচ্ছে চুল। যা আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এই জন্যই এটির যত্ন নেওয়া আমাদের কর্তব্য এবং দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালন করার জন্য যথাযথ জানা থাকার দরকার।

আর এই জন্যই আপনারা জানতে চেয়েছিলেন চুলের তেল দেওয়ার নিয়ম ও সঠিক সময় কোনটা। আশা করা যায় সেই কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তরটি যথাযথ পেয়েছেন। আপনি যদি পুরো আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে পূর্ণাঙ্গ ধারণা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন। উল্লিখিত বিষয়ের উপরে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url