খাবার অনিরাপদ হওয়ার ১০টি কারণ - অনিরাপদ খাবারের তালিকা
যদি অনিরাপদ খাবার হওয়ার ১০টি কারণ এবং অনিরাপদ খাবারের তালিকা সম্পর্কে জানতে চান। অনিরাপদ খাবার সম্পর্কে জেনে নিজের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে এই আর্টিকেল পুরো পড়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ এখানে থাকা অনিরাপদ খাবারের তালিকা এবং অনিরাপদ খাবার খেলে কোন রোগ গুলো হয় জানার মাধ্যমে নিজের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারবেন।
আপনি কি জানেন অনিরাপদ খাবার খাওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্প মেয়াদী কোন রোগগুলো। যদি না জেনে থাকেন তাহলে অনিরাপদ খাবার খাওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার জন্য পুরো আর্টিকেল পড়ে জেনে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
সারসংক্ষেপ
সময়ের সাথে সাথে অনিরাপদ খাবারের সংখ্যা বাড়ছে। যার ফলে মানব দেহে রোগ বালাইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। মানুষ তার নৈতিকগত দিকগুলোকে পাশে হটিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে। আপনি কি জানেন খাবার অনিরাপদ হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অতি উল্লেখযোগ্য খাবার অনিরাপদ হওয়ার ১০টি কারণ জানা প্রয়োজন।
এই কারণগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং অনিরাপদ খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। যেন মানব শরীরে বিভিন্ন রোগবালাই বাসা বাধঁতে না পারে। আমাদের স্বাস্থ্যকে আমাদেরই খেয়াল রাখতে হবে। এর ফলে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলে তাই করতে হবে। তবুও স্বাস্থ্যের বিন্দুমাত্র ক্ষতি মেনে নেয়া যাবে না।
প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ অনিরাপদ খাবার গ্রহণের ফলে মারা যাচ্ছে। আবার হাজার হাজার মানুষ অনিরাপদ খাবার খাওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই আসুন খাবার অনিরাপদ হওয়ার ১০টি কারণ এবং অনিরাপদ খাবারের তালিকা সম্পর্কে জেনে নেই।
অনিরাপদ খাদ্য কাকে বলে
যেই সকল খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাকে অনিরাপদ খাদ্য বলে। যেমন বাসি-পচা, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য যুক্ত ইত্যাদি খাবারগুলোকেও অনিরাপদ খাবার বলা হয়। এই সকল খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখাই শ্রেয়।
খাবার কিভাবে অনিরাপদ হয়
এই অনিরাপদ খাবার খাওয়ার ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আর দিন যত যাচ্ছে অনিরাপদ খাবারের সংখ্যা তত বেড়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত ভেজাল এবং রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর কারণে খাবার অনিরাপদ বা বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দেখা যাচ্ছে মানুষ অসুস্থতার সাথে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। আর এটিকে আটকানোর মূল উপায় হতে পারে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
আমরা অনেকেই খাবার পোঁচে বা গন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও খেয়ে থাকি। কিন্তু এটা জানি না যে এই খাবার কতটা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক। তাই এই সকল খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। রাসায়নিক দ্রব্য যুক্ত খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। যেমন ফরমালিনযুক্ত খাবার এবং বিভিন্ন ভেজালযুক্ত খাবার।
নিজেকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার থেকে বিরত রাখা উচিত। আবার আমরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেয়ে থাকি। এটিও মূলত অনিরাপদ খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সকল খাবার খাওয়ার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ অসুস্থ এবং মৃত্যু মত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও এর সংখ্যা কি পরিমান রয়েছে তার কোন সঠিক ধারণা আমাদের কাছে নেই।
কিন্তু এক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে প্রতি বছর অনিরাপদ খাবার ফলে মানুষের চিকিৎসা ভিত্তিক ব্যয় সহ বাংলাদেশকে ১১০ কোটি ডলার এর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয় এর সাথে যুক্ত রয়েছে আরও কিছু দেশ যেমন চীন ও ইন্ডিয়া সহ আরো বেশ কিছু দেশ।
এই লিস্টে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ১০ নম্বরে। আরো এক তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি যার সংখ্যা হচ্ছে ১১ হাজার কোটি ডলার এবং এর মধ্যে চিকিৎসা ভিত্তিক ব্যয় হচ্ছে ১৫০০ কোটি ডলার। তাই নিজেদের খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন আনা খুব জরুরী।
খাবার অনিরাপদ হওয়ার ১০টি কারণ
আমাদের অসচেতনতা এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আসায় খাদ্যকে অনিরাপদ করে দিচ্ছে যার কারণে প্রতিনিয়ত আমরা অসুস্থতার শিকার হচ্ছি। বর্তমান আধুনিক সময়ে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হলেও খাবারের মানের উন্নতি হচ্ছে না।
বরঞ্চ প্রতিনিয়ত আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। একটু পিছনে ঘুরে তাকালে দেখা যাবে। যে যেই যেভাবে পারছে খাদ্যকে অনিরাপদ করে তুলছে। রাস্তার ধারে ফুচকা ব্যবসায়ী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ফুচকা বিক্রি করছে। অথচ আমরা জানার পরেও সেই ফুচকা খুব আনন্দের সাথে গ্রহণ করছি।
আরো বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফাস্টফুড খাওয়া যাবে কিন্তু সেটি তৈরি হতে হবে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে, যেগুলো রান্না করছে সেগুলো স্বাস্থ্যকর হতে হবে এবং যে পরিবেশন করছে তারও স্বাস্থ্যকর নীতিগুলো মেনে চলতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে এর উল্টো।
আর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা একটু বেশি মুনাফার আসায় বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করার মাধ্যমে খাদ্যকে মজুদ করে রাখছে। কিন্তু এই খাদ্য দীর্ঘ সময় মজুদ করার ফলে কতটা যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসছে তা হয়তো অনেকের অজানা।
- রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে খাদ্যের নিরাপত্তা হারাচ্ছে।
- দীর্ঘ সময় খাবার রেখে দেওয়ার কারণে অনিরাপদ হয়।
- খাবার খোলা রেখে দিলে মাছি ও পোকামাকর এর কারণেও অনিরাপদ হয়ে যায়।
- দীর্ঘ সময় ফ্রিজে বা যেকোনো পদ্ধতিতে রাখার ফলেও খাদ্য অনিরাপদ হয়।
- বিভিন্ন ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আসায় দীর্ঘকালীন সময় স্টক করে রাখার জন্য যেই সকল রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে তার কারণেও খাদ্য অনিরাপদ হয়।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রান্না করার ফলেও খাদ্য অনিরাপদ হয়।
- খাবারের পাত্র এবং রান্নাবান্না করার রান্নাঘর অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণেও খাবার অনিরাপদ হয়।
- রাস্তার পাশে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার খোলা রেখে দেওয়া অনিরাপদ হওয়ার কারণ।
- বাবুর্চি বা রাঁধুনি অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় রান্না করার ফলে খাবার অনিরাপদ হয়।
- খারাপ তেল বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত যুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
অনিরাপদ খাবারের তালিকা
জানা গেছে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ অনিরাপদ খাবার খাওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আরো কষ্টকর বিষয় হচ্ছে এর মধ্যে থেকে প্রায় ৪ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। কেউ যখন কাউকে অনিরাপদ খাবার সামনে উপস্থাপন করে বা পরিস্থিতির শিকারে ফেলে দেয়। তখন ওই ব্যক্তি একবার ভেবে দেখে না যে এই অস্বাস্থ্যকর বা অনিরাপদ খাবার যখন কোন ব্যক্তি খায় তার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা খারাপ বয়ে আনবে। তাই কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে অনিরাপদ খাবারের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে।
- অপরিষ্কার পানি বা অপরিষ্কার পাত্রে পানি পান করা একদম অনিরাপদ।
- অর্ধ বা আধা সিদ্ধ খাবার খাওয়া যাবেনা। কারণ কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেগুলো পুরোপুরি ভাবে ধ্বংস হয় না।
- পচা অথবা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
- অপরিষ্কার কোন শাকসবজি বা ফলমূল খাওয়া যাবে না।
- অস্বাস্থ্যকর তেল এবং অস্বাস্থ্যকর পাত্র কোন কিছু ভেজে অথবা রান্না করে খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বাইরের ফাস্টফুড ফুচকা, চটপটি, বার্গার, আখের রস এবং হালিম ইত্যাদি কম খাওয়া ভালো। তবে না খাওয়া সবচেয়ে উত্তম।
- মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার খাওয়া যাবে না। কোন খাবার কেনার আগে অবশ্যই মেয়াদ দেখে কিনুন।
- যেকোনো ধরনের মাংস রান্না করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সঠিক তাপমাত্রায় রান্না হচ্ছে কিনা। আধা সেদ্ধযুক্ত মাংস খাওয়া যাবেনা।
- প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার কম খাওয়াই উত্তম। এমনকি বিরত থাকা এর থেকেও বেশি উত্তম।
অনিরাপদ খাবারের স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কোনটি
অনিরাপদ খাবারের সংখ্যা এমন ভাবে বাড়ছে যে এর থেকে বেঁচে থাকা বড্ড মুশকিল। অনেক ক্ষেত্রে আপনি চাইলেও এর থেকে বেঁচে থাকতে পারছেন না। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ এবং স্বাস্থ্যের সচেতনতা বৃদ্ধি। যেন কেউ অনিরাপদ খাবার পরিবেশন বা প্রস্তুত করতে না পারে। যেই অনিরাপদ খাবার মানুষকে পরিবেশন করবে তার পক্ষে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এই কথা এজন্য বলছি কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে রয়েছে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অনিরাপদ খাবার খাওয়ার ফলে স্বল্পমেয়াদি প্রভাব কোনটি জানেন। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন না এর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে। এর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব খুব ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে।
অনিরাপদ খাবারের স্বল্পমেয়াদি প্রভাব হচ্ছে বমি, পেট ব্যথা, এলার্জি এবং ডায়রিয়া সংক্রান্ত রোগ গুলো। দীর্ঘমেয়াদ প্রভাব আরো ভয়ানক হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি সংক্রান্ত যেগুলো রোগ রয়েছে এবং ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এই জন্য অনিরাপদ খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং অন্যকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এই খাদ্যগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভয়ানক।
অনিরাপদ খাবার খেলে কি কি রোগ হয়
মানুষের দৈনিক জীবনের বেশি ভাগ রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে অনিরাপদ খাবার। আমাদের দেশে অনিরাপদ খাবারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং রোগের সংক্রমণের হাড়ও বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হচ্ছে এর অন্যতম কারণ হলো অনিরাপদ খাবার।
তাইতো অনিরাপদ খাবার থেকে সরে এসে নিরাপদ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। আর তা না হলে দিন দিন রোগে আক্রান্তের প্রভাব ও প্রকোপ বাড়তে থাকবে। এর ফলে দেখা যাবে মানব শরীরে ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনিজনিত রোগ, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এবং এলার্জি সহ আরো বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় আমরা চারিদিক থেকে অনিরাপদ খাবারের মধ্যে আবদ্ধ রয়েছি। এই আবদ্ধ থেকে মুক্তির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আর তা না হলে প্রতিনিয়ত মানুষের স্বাস্থ্যের হীনতা ঘটবে। আপনারা যদি খাবার অনিরাপদ হওয়ার ১০টি কারণ এবং এর তালিকা সম্পর্কে জেনে থাকেন। তাহলে ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন কোন কারণগুলোর জন্য খাবার অনিরাপদ হয়। এই জন্য সেই কারণগুলোর বিপক্ষে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই এগুলো থেকে নিজেকে এবং অন্যকে বাঁচিয়ে রাখা অনেকটাই সম্ভব হবে। আশা করা যায় পুরো আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আপনাকে তথ্য দিয়ে উপকৃত করা।
এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url