ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
আপনি যদি ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আরও জানতে চান যে, ই ক্যাপ এর কাজ কি এবং ই ক্যাপ কখন খেতে হয়। তাহলে এদিক ওদিক সময় নষ্ট না করে যথাযথ তথ্য পাওয়ার জন্য পুরো আর্টিকেল আপনাকে সহযোগিতা করবে। কারণ ই ক্যাপ চুল এবং ত্বকসহ নানান সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। তাই ই ক্যাপ আরো সমাধান পেতে ই ক্যাপ উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
আমরা সকলেই চাই চুল ও ত্বকের সঠিক সমাধান। তাইতো ই ক্যাপ উপকারিতা সম্পর্কে জেনে ব্যবহার করতে চাই। যারা এই চিন্তা নিয়ে আর্টিকেল পড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ এর উপকারিতা গুলো ই ক্যাপ ব্যবহারের উদ্বুদ্ধ করবে।
পোস্ট সূচিপএঃ
ই ক্যাপ এর কাজ কি
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ই ক্যাপ। শরীরে যখন ভিটামিন ই এর ঘাটতি দেখা যায়। তখন সেই ঘাটতি পূরণ করার জন্য ই ক্যাপ খাওয়া বা ব্যবহার করা হয়। এই ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। যা মূলত ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রেও দারুন উপকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চুল পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে চুলের গোড়া ভেঙ্গে যাওয়া পর্যন্ত রোধ করার জন্য ই ক্যাপ ব্যবহার করা যায়।
আবার ত্বকের অনেক সমস্যার সমাধান হিসেবে ই ক্যাপ ব্যবহার করা হয়। এর আবিষ্কারের কথা শোনা যায় ১৯২২ সালে। আবিষ্কারের মূল বক্তব্য হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরণ করা। আরো অনেক ই ক্যাপ এর উপকারিতা রয়েছে। শুধুমাত্র যে ই কাপের উপকারিতা রয়েছে তা নয় পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যা পুরো আর্টিকেল বিস্তারিত পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন।
ই ক্যাপ এর উপকারিতা
মানুষ এর বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরিক নানান সমস্যা সামনে এসে ধরা দেয়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বার্ধক্য জনিত কারণে চুল, ত্বক, চোখ এবং মস্তিষ্ক সহ নানান সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর মধ্যে উপকারিতা রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
কিন্তু তাই বলে যে প্রাপ্তবয়স্করা এর থেকে উপকারিতা নিতে পারবে না তা নয়। প্রাপ্তবয়স্করা তাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং চুল পড়ে যাওয়া রোধ সহ আরো কিছু সমস্যা সমাধান এর থেকে নিতে পারবে। তাই আসুন ই ক্যাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
ত্বকের ক্ষেত্রে এর উপকারিতা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। শুষ্কতা প্রতিরোধ এবং সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশি থেকে ত্বককে রক্ষা ও কম ক্ষতির নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এছাড়াও ত্বকের দাগ, বলিরেখা, ব্রুন এবং ত্বকের চামড়ার বার্ধক্য ছায়া বা ছাপ এর হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
চুলের ক্ষেত্রে এর উপকারিতা
আমাদের অধিকাংশের চুলের সমস্যা যেন নতুন কিছু নয়। প্রতিনিয়ত চুল পড়ার সমস্যা লেগেই থাকে। সেটি হতে পারে অকালে চুল পড়া অথবা যেকোনো সময় চুল পড়ার সমস্যা। চুলের ফলিক দুর্বল হয়ে যাওয়া অথবা চুল ভেঙ্গে যাওয়া নানান সমস্যাই ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ মাসে ৫ লক্ষ টাকা ইনকাম উপায় সমূহ
এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক এবং অতিরিক্ত ট্রেস হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে। এছাড়াও চুলকে মসৃন এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাইতো চুলের উপকার এবং পুষ্টিগুণ আগুন বৃদ্ধি করার জন্য ই ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
চোখের জন্য উপকারিতা
চুল এবং ত্বকের পাশাপাশি চোখের ক্ষেত্রেও ই ক্যাপ এর উপকারিতা রয়েছে। ই ক্যাপ এর সাহায্যে চোখের ছানি এবং বয়স এর কারনে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হয় তার হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হচ্ছে চোখের রোগ যার কেন্দ্রীয় অংশ হচ্ছে রেটিনা যা মাকুলার প্রভাবিত হওয়ার ফলে চোখ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর এর থেকে রক্ষা পেতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সাহায্য করে।
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন ই ক্যাপসুল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। শরীরে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে গেলে বিভিন্ন রোগ আক্রমণ করে থাকে। আর ভিটামিন ই ক্যাপসুল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য শ্বেত রক্তকণিকা এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। যার ফলে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সব সময় প্রস্তুত থাকতে পারে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পারেন।
মস্তিষ্কের সুরক্ষা
মস্তিষ্কের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও ই ক্যাপ খেতে পারেন। এটি আপনার স্নায়বিক সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য আলজাইমার এবং ডিমেনশিয়ার এর মত ঝুঁকিপূর্ণ রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ডিমেনশিয়ার হচ্ছে সেই রোগ যা মানুষের মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে ব্যাঘাত ঘটায়।
উদাহরণস্বরূপ চিন্তাভাবনা, কথা বলা এবং মনে রাখা সহ নানান সমস্যার দেখা দেয়। এই রোগের ফলে ব্যক্তি অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড করে থাকে। আর আলজাইমার রোগ হচ্ছে এক ধরনের বার্ধক্য জনিত এবং স্নায়বিক অবক্ষয় ধরনের রোগ। এই রোগের কোন প্রতিকার নেই বলে জানা যায়।
ই ক্যাপ এর অপকারিতা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর যেমন উপকারিতা আছে ঠিক তেমন ভাবে এর অপকারিতাও রয়েছে। ই ক্যাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত হারে গ্রহণ করা। আমরা বেশি ফলাফল লাভের আশায় বেশি গ্রহণ করে থাকি। এটি মূলত মোটেও কাম্য নয়।
আপনি যদি ফলাফলের আশায় বেশি গ্রহণ করেন তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনাকে ঘিরে ধরবে। যা খুবই ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। তাইতো পরিমান মত চাহিদার বেশি নয় এমন ভাবে গ্রহণ করতে হবে। তাই আসুন ভিটামিন ই ক্যাপ এর অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
- চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ই ক্যাপ অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে বমি বমি ভাব হতে পারে।
- এটি মস্তিষ্কের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথা ব্যথা হতে পারে।
- আবার বেশি ই ক্যাপ ব্যবহার করার ফলে রক্তক্ষরণ এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা ই ক্যাপ ব্যবহার করার ফলে এলার্জি বা চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গর্ভবতী নারীরা ই ক্যাপ খাওয়ার আগে অবশ্যই যথাযথ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন।
ই ক্যাপ ব্যবহারের নিয়ম
আমরা এতক্ষন ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তথ্যাবলী জানলাম। কিন্তু ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াও আরো কিছু তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে। তা হচ্ছে ই ক্যাপ ব্যবহারের নিয়ম। আপনি যদি চুলে ই ক্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে উপকারিতা পেতে চান তাহলে এর ব্যবহারের নিয়ম গুলো জানতে হবে।
যেন চুলের গ্রোথ, ক্ষয় রোধ, চুলের উজ্জ্বলতা, চুলের আগা ও গড়া ভাঙ্গা ইত্যাদি রোধ করতে পারেন। আর পার্লারে না গিয়ে নিজের চুলের স্বাস্থ্যের নিজেই খেয়াল রাখতে পারেন। তাই আসুন ই ক্যাপ ব্যবহারের নিয়মাবলী জেনে আসি।
- চুল পড়া ও গ্রোথ বৃদ্ধি করার জন্য ই ক্যাপ ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। ই ক্যাপ এর সাথে নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
- এরপরে চুলের উপকারিতার ক্ষেত্রে ই ক্যাপ এর সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মাথায় মাসাজ করতে পারেন। এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিয়ে পরিষ্কার পানি দ্বারা মাথা দিয়ে ফেলুন।
- চুলের ক্ষয় রোধ করার জন্য ই ক্যাপ এর সাথে হেয়ার মাক্স যুক্ত করার মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে চুলের ক্ষয় রোধের পাশাপাশি আদ্রতা বজায় থাকবে।
- শুধুমাত্র ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করার মাধ্যমেও চুলের উপকারিতা মিলবে। ক্যাপসুল এর যে কোন এক জায়গায় সুইচ দ্বারা ফুটা করে মাথার বিভিন্ন জায়গায় ঘষতে থাকুন। এর আধাঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দ্বারা মাথা ধুয়ে ফেলুন।
- ই ক্যাপসুল এর যেকোনো জায়গায় ফোটা করার পরে তা হাতে নিয়ে চুলের আগায় আলতো করে লাগাতে থাকুন। এতে করে চুলের ফাটা রোধ করতে পারবেন।
- অবশ্যই অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ই ক্যাপের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে দূরে থাকাই ভালো। তা না হলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
ই ক্যাপ কখন খেতে হয়
দেখুন এই ক্যাপ কখন খেতে হয় এই বিষয় নিয়ে অনেকের দ্বিধাদ্বন্ধ রয়েছে। এই বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে না থেকে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ আপনার শরীরের কন্ডিশন বা পরিস্থিতি সম্পর্কে একমাত্র চিকিৎসক সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে। তবুও ই ক্যাপসুল এর মধ্যে কিছু ভাগ রয়েছে।
যেগুলোর খাওয়ার সময় ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনার শরীরের কন্ডিশন অনুযায়ী আপনাকে তা গ্রহণ করতে হবে। আর সেই অনুযায়ী কতটুকু পরিমান দিনে খাওয়া উচিত তা একজন চিকিৎসক সঠিক ভাবে বলতে পারবে। আশা করা যায় ই ক্যাপ কখন খেতে হয় তার যথাযথ পরামর্শ পেয়েছেন।
ই-ক্যাপ এর দাম
সাধারণত ই ক্যাপসুল তিন ধরনের হয়ে থাকে ২০০, ৪০০ এবং ৬০০ আর এই ৩ ধরনের ক্যাপসুল এর দাম এর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ই ক্যাপ ২০০ এর দাম ৫ থেকে ৬ টাকা, ৪০০ এর দাম ৭ টাকা আর ৬০০ ই ক্যাপ এর দাম ৮ টাকা হতে পারে। যদিও সময় ভেদে ই ক্যাপ এর দাম ওঠানামা করে থাকে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যথাযথ জানা গেছে। যা জেনে আপনি হয়তো অনেকে উপকৃত হয়েছেন। এমনকি ই ক্যাপ বা ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়া এবং ব্যবহারের পরেও এর যথাযথ উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। যদি না আপনি অতিরিক্ত ই ক্যাপ খেয়ে থাকেন। কারন ই ক্যাপ অতিরিক্ত খাওয়ার ফলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আশা করি ই কাপ খাওয়ার ফলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন এবং যথাযথ ফলাফল পাবেন। অবশ্যই ই ক্যাপ কখন খেতে হয় এবং ই ক্যাপ ব্যবহারের নিয়ম এর সম্পর্কে যথাযথ জেনে তারপরে ই ক্যাপ গ্রহণ করুন।
এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url