সুষম খাদ্য তালিকা ও সুষম খাদ্যের ৬টি উপাদান জেনে নিন
আপনি যদি সুষম খাদ্য তালিকা এবং সুষম খাদ্যের ৬টি উপাদান সম্পর্কে জানতে চান। সেই তথ্যগুলো জেনে নিজের জন্য সুষম খাদ্য তালিকা গঠন করতে চান। তাহলে এই পুরো আর্টিকেল দেওয়া তথ্যগুলো পড়ার মাধ্যমে নিজের জন্য উপযুক্ত সুষম খাদ্য তালিকা গঠন করতে পারবেন। তাহলে আর দেরি না করে এখনই মূল্যবান সময়টি ব্যয় করার মাধ্যমে পুরো তথ্যটি পড়ে নিন।
আমরা সকলেই চাই সুষম দেহের অধিকারী হতে কিন্তু সুষম খাদ্য গ্রহণ করার সময় অনীহা দেখায়। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য ব্যবস্থার কারণেই স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে থাকে। তাই তো স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর জন্য সুষম খাদ্যের তালিকা জানা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি সুষম খাদ্যের যেই উপযুক্ত ৬টি উপাদান রয়েছে তাও জেনে নেওয়া দরকার।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
সারসংক্ষেপ
আমাদের দৈহিক ও শারীরিক অবস্থার পরিণতি সম্পর্কে অবগত হতে হবে। কারণ শারীরিক অবস্থার অবনত হলে বিভিন্ন রোগ বালায়ের আবাসস্থল হিসেবে গঠিত হয়। যা মোটেও ভালো কোন অবস্থা নয়। আর এই জন্য সুষম দেহের অধিকারী হতে হবে। আর সুষম দেহের অধিকারী হওয়ার জন্য সুষম খাদ্য তালিকা এবং সুষম খাদ্যের ৬টি উপাদান সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকতে হবে।
শুধুমাত্র যে জ্ঞান থাকলেই যথেষ্ট তা নয় সেই জ্ঞান বাস্তবায়ন করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাইতো আপনাদের সুবিধার্থে সুষম খাদ্যের উপযুক্ত তালিকা এবং মূল যেই সুষম খাদ্যের ৬টি উপাদান রয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। সুষম খাদ্যের চাট বা তালিকা মহিলা ও পুরুষ উভয়ের জন্য দরকার।
সুষম খাদ্য তালিকা সম্পর্কে
সুষম খাদ্য হচ্ছে সেই তালিকা যার মধ্যে সকল প্রকারের খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকবে যা আপনার দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ শরীরের তাপ উৎপাদন এবং যথাযথ কর্মক্ষম থাকতে সহায়তা করবে। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত রূপে বলতে গেলে যেই খাদ্য শিকল আপনার দেহের সকল চাহিদা পূরণ করবে এবং সঠিক পুষ্টি প্রদান করবে তাকে সুষম খাদ্য বলে।
এখন সুষম খাদ্যের মধ্যে ৬টি উপাদান রয়েছে। মূলত এই ৬টি উপাদান দ্বারা সুষম খাদ্য গঠন করা হয়। শুধু তাই নয় সুষম খাদ্য গঠিত হয় বয়স ভেদ অনুযায়ী। তাই আসুন সুষম খাদ্যের তালিকা এবং ৬টি উপাদানের মধ্যে কোন বয়সের মানুষের কি পরিমান চাহিদা দরকার তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
সুষম খাদ্যের ৬ টি উপাদান
আমাদের দেহের শারীরিক গঠন এবং সকল প্রকার চাহিদা পূরণ করার জন্য সুষম খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। আর এই সুষম খাদ্যকে ৬টি উপাদানে ভাগ করা হয়েছে। যার প্রত্যেকটি উপাদান শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। যদি নিচে উল্লেখ থাকা একটি উপাদান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।
তাহলে সুষম খাদ্যের যেই শিকল রয়েছে তা ভঙ্গ হবে এবং শরীরের পুষ্টি ও চাহিদা পূরণে ঘাটতি দেখা যাবে। তাই আসুন সেই সকল গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যের ৬টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নেই।
- ১. শর্করা
- ২. আমিষ
- ৩. স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাবার
- ৪. ভিটামিন
- ৫. খনিজ
- ৬. পানি
১. শর্করা
শর্করা আমাদের দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ কারণ শর্করা জাতীয় খাদ্য শরীরের শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার দারুন উৎস। কারণ এখান থেকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শক্তি পেয়ে থাকি। শর্করা জাতীয় খাদ্যের মধ্যে রয়েছে আলু, ভুট্টা, ভাত, রুটি, পাস্তা, ওটস, গাজর, কুমড়া, কলা, আম, কমলা, মটরশুটি, মসুর ডাল এবং ছোলা সহ আরো অনেক খাবার। কিন্তু শর্করা জাতীয় খাদ্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমটি হচ্ছে সরল এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে জটিল।
সরল জাতীয় শর্করা খাদ্য হচ্ছে মধু, কলা, আপেল, আঙ্গুর, গুড় এবং চকলেট সহ আরো কিছু খাবার। এই সকল খাবার তৎক্ষণাৎ শক্তি প্রদান করার ক্ষেত্রে দারুন কাজ করে। কিন্তু এই সকল খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস এবং তাড়াতাড়ি ওজন বেড়ে যাওয়ার মত অসুবিধা হতে পারে। কারণ খাবারগুলোতে শর্করার পরিমাণ বেশি রয়েছে তাই পরিমান মত গ্রহণ করবেন।
জটিল জাতীয় শর্করা খাদ্য হচ্ছে শাকসবজি ও শস্য খাবার যা দেহে দীর্ঘক্ষণ শক্তি যোগায় রাখতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ওজন কমাতেও দারুন কাজ করে। তাই তো সরল জাতীয় খাবারের থেকে অনেক ক্ষেত্রেই উত্তম হচ্ছে জটিল শর্করা খাবার। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় জটিল শর্করা খাদ্য রাখুন এতে করে অনেক উপকার পাবেন।
২. আমিষ
আমিষ আমাদের দেহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ আমিষ দেহের বৃদ্ধি এবং গঠনে কাজ করে যায়। শুধু তাই নয় প্রোটিন এনজাইম, হরমোন, পেশী গঠন এবং শরীরের নানান প্রয়োজনীয় কার্যকলাপের জন্য ভূমিকা পালন করে। আমিষ দুটি উৎস থেকে পাওয়া যায় যা হচ্ছে উদ্ভিদ আমিষ এবং প্রাণীজ আমিষ।
প্রানীজ আমিষ প্রোটিন সংগ্রহ বা সম্পূর্ণ প্রোটিন চাহিদা পূরণ করার জন্য দারুন উৎস। কিন্তু উদ্ভিদ আমিষ এর মধ্যে প্রোটিনের কিছুটা স্বল্পতা রয়েছে। তবে দুই উৎস থেকে প্রোটিন ও অ্যামাইনো এসিড গ্রহণ করা উচিত। শরীরে ঘাটতির থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করা কখনোই ভালো নয়।
সাধারণত আমিষের চাহিদা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক সক্ষমতা এবং দৈনিক কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে। আপনি যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন তাহলে দৈনিক আমিষের চাহিদা হচ্ছে ০.৮০ গ্রাম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ৬০ থেকে ৬৫ কেজি ব্যাক্তিদের প্রাপ্তবয়স্ক ধরা হয় তাদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। কিন্তু তবুও শারীরিক সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে আমিষ গ্রহণ করা উচিত। এই জন্য সর্বপ্রথম যাচাই-বাছাই করুন বয়স ও শারীরিক কার্যকলাপ সহ শারীরিক সক্ষমতা।
৩. স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাবার
স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাবার শারীরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য উপাদানটির চাহিদা অপরিহার্য। আমরা প্রতিদিন স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাবার থেকে শতকরা ২০ থেকে ২৪ পার্সেন্ট শক্তি পেয়ে থাকে। তাইতো অন্যান্য উপাদান এর পাশাপাশি চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৪. ভিটামিন
সুষম খাদ্যের ৬টি উপাদানের মধ্যে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ ভিটামিনের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই প্রতিদিন পরিমাণ মতো এবং শারীরিক চাহিদার অনুযায়ী ভিটামিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। আর তা না হলে নানান রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে পাতাকপি, মিষ্টি আলু, কিসমিস, ব্রকলি, ডিমের কুসুম, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, পালং শাক, বাঁধাকপি, লাল মরিচ ইত্যাদি। তাই আজ থেকে খাদ্য তালিকায় ভিটামিন যুক্ত খাবার সংযুক্ত করুন।
৫. খনিজ
খনিজ পদার্থ যুক্ত খাবার শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। কারণ খনিজ যুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আইরন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন ইত্যাদি। তাই এই সকল খনিজ যুক্ত খাবারের মধ্যে কোন খাবারগুলো পড়ে সেইগুলো জেনে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন। যেমন খনিজ যুক্ত খাবার হচ্ছে দুগ্ধজাত খাবার, ফলমূল, শাকসবজি. মাছ ও মাংস ইত্যাদি।
৬. পানি
আপনারা হয়তো জানেন পানির অপর নাম হচ্ছে জীবন। সুষম খাদ্য তালিকায় প্রধান এবং অন্যতম খাদ্য হচ্ছে পানি। যেই খাদ্য ছাড়া বাকি ৬টি উপাদান অকার্য হয়ে পড়বে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা উচিত। কিন্তু তবুও আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করবে দিনে কি পরিমান পানি পান করতে হবে।
যেমন যারা পরিশ্রমী তাদের স্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত পানি পান করা উচিত। আবার অতিরিক্ত গরমের সময় শরীর তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মানুষের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে পানি নির্গত হয়। এই জন্য নিয়মিত পরিমাণ মাফিক পানি পান করা উচিত। তবে সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা উত্তম।
সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য
সুষম খাদ্যের প্রধান কাজ কি? সুষম খাদ্যের প্রধান কাজ হচ্ছে প্রত্যেকটি খাবার সঠিক অনুপাতে শরীরের সকল জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া। যাতে করে শরীরের সঠিক পরিমাণে শক্তি ও চাহিদা পূরণ করতে পারে। সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেই।
- শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ ও পানি সহ যেই উপাদান গুলো রয়েছে তার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো সঠিক অনুপাতে থাকা।
- সঠিক পরিমাণে শক্তির জোগান করতে পারা যাতে করে দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং যেই সকল কার্যকলাপ রয়েছে তা সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হওয়া।
- শারীরিক শক্তি ও বিকাশে যথাযথ বিকাশিত হওয়া এবং পুষ্টি সরবরাহ করা।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
- শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক সুষম খাদ্য তালিকা
একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক সুষম খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন থাকতে পারে। কেন পরিবর্তন থাকতে পারে তার কারণ হচ্ছে বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক সক্ষমতা এবং দৈনিক কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে। তাহলে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি দৈনিক সুষম খাদ্য তালিকায় কি কি থাকতে পারে তা জেনে নেই।
- সাধারণত দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও পুরুষের জন্য ক্যালরি চাহিদা রয়েছে। তার পরিমাণ হচ্ছে পুরুষের জন্য ২৫০০ থেকে ৩০০০ এবং মহিলার জন্য ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালারির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
- শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তাই ২৫০ গ্রাম ভাত অথবা ২৫০ গ্রাম রুটি খেতে পারলে ভালো। আমাদের শরীরের শর্করা খাবার থেকে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শক্তি পেয়ে থাকে।
- প্রতিদিন আলু ৯০ গ্রাম এবং ছোট মাছ ৮০ গ্রাম খেতে হবে। এর থেকে বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- দৈনিক শাকসবজি ২০০ গ্রাম, মাংস ৬০ গ্রাম এবং দুধ ২০০-২৫০ গ্রাম খেতে হবে।
- এই খাবারগুলো একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিবেলার খাবার যা সে প্রতি বেলায় ঠিক সময় মত খাবে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থার কারণে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা যাতে করে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো যায়। আপনারা এতক্ষণ সুষম খাদ্যের তালিকা এবং এর সাথে সুষম খাদ্যের ৬টি উপাদান সম্পর্কে জেনেছেন। যা আপনাদের সামনে সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা তুলে ধরতে সহযোগিতা করেছে। আশা করি এই খাদ্য তালিকা এবং উপাদান গুলো পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হবেন।
আর এই তালিকা এবং উপাদান গুলো পড়ার মাধ্যমে সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে অবস্থান নিতে পারবেন। আমাদের সকলের উচিত শারীরিক চাহিদা ও দৈনিক কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে খাদ্য অভ্যাস গড়ে তোলা। যা অনেক মানুষের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না। পুরো আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধু এবং খাদ্য সচেতন ব্যক্তিদের তথ্যগুলো জানিয়ে দিন। যাতে করে তারাও নিজের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে।
এসএইচ নিউজস্টোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url